বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান বাণিজ্য বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করেছে। মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এ চুক্তিতে সই করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে এমন পদক্ষেপকে ওয়াশিংটনের প্রতি এক ধরনের কূটনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। চীনের রাষ্ট্র পরিষদের বিবৃতির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ‘৩.০ সংস্করণ’ নামে পরিচিত এ নতুন চুক্তিটি শুধু বাণিজ্য নয়; বরং অর্থনীতি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বিস্তৃত করবে।
এটি ২০১০ সালে কার্যকর হওয়া চীন ও আসিয়ানের প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ আসিয়ান দেশগুলোকে চীনের বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করেছে। ফলে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে।
২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসে চীন-আসিয়ান বাণিজ্যের পরিমাণ ৭৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এ বাণিজ্যের বেশির ভাগই সমন্বিত উৎপাদন শৃঙ্খলকে কেন্দ্র করে। তবে ক্রমবর্ধমানভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভোক্তাদের জন্য চীনের প্রস্তুত পণ্যও এতে যুক্ত হচ্ছে। লি চিয়াং বলেন, চীন ও আসিয়ানের মধ্যে গভীরতর বাণিজ্যিক সম্পর্কের ফলে ‘বিস্তৃত ও উচ্চমানের অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ গড়ে উঠবে।
মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে জাপান সফরে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাপান সফরের পরপরই বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প। এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে হবে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। তাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ আপাতত থামবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কারণ মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের অংশগ্রহণের মধ্যেই দুই দেশ একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির কাঠামো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ কথা স্বীকার করেছেন। একে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতির গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও শির মধ্যকার বৈঠকে চুক্তিটি চূড়ান্ত হতে পারে। এয়ারফোর্স ওয়ানে বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শির প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে। আমি মনে করি, আমরা একটি চুক্তি নিয়েই ফিরব।’
রোববার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৪৭তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন ট্রাম্প। শুধু যোগ দেওয়া নয়; তিনি সম্মেলনের শিরোনাম, বাণিজ্য চুক্তি এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিজেই তত্ত্বাবধান করেন। তবে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তিগুলোতে ট্রান্সশিপমেন্ট ও সেমিকন্ডাক্টর শুল্কের মতো বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়নি। বিশেষ করে ট্রাম্পের সদা পরিবর্তনশীল বাণিজ্যনীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অবস্থা কেমন হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষই বাণিজ্যযুদ্ধ আরও জোরালো হওয়ার আশঙ্কা কমাতে চায়। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে শুল্কের বড় একটি অংশ স্থগিত রয়েছে। তবে কিছুদিন আগে চীনা পণ্যের ওপর ১ নভেম্বর থেকে শতভাগ নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে চীনে ও যুক্তরাষ্ট্রে আলাদা বৈঠক হতে পারে এমন ইঙ্গিতও দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা সাক্ষাৎ করার জন্য সম্মত হয়েছি। চীনে আমরা দেখা করব এবং যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা হবে, হয় ওয়াশিংটন বা মার-আ-লাগোতে।’ দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘মনে হচ্ছে চীনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে যাচ্ছি আমরা।’ #

















