বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কল্পনা করুন, একটি জাহাজ চলছে শুধুমাত্র বাতাসের শক্তিতে, কোনো জ্বালানি ছাড়াই! চীনের সাংহাই ওয়াইগাওকিয়াও শিপিং বিল্ডিং (এসডাব্লিউএস) কোম্পানি লিমিটেড সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। বিশাল তিনটি পাল, প্রতিটি প্রায় ৪০ মিটার লম্বা, নিয়ে তৈরি হয়েছে ২৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৪৪ মিটার প্রস্থের এক অত্যাধুনিক জাহাজ।
এই ‘ব্র্যান্ডস হ্যাচ’ নামের জাহাজটি জ্বালানি ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনে বাতাসকে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছে, যা পরিবেশবাদীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এটি শুধু জ্বালানি সাশ্রয়ই করছে না, কার্বন নিঃসরণ কমাতেও রাখছে বিশাল ভূমিকা।
ব্রিটেনের ইউনিয়ন মেরিটাইম লিমিটেডের (ইউএমএল) জন্য চীনের তৈরি ‘ব্র্যান্ডস হ্যাচ’ জাহাজটি জ্বালানি ছাড়াই বাতাসের সাহায্যে স্রোতের অনুকূলে পৌঁছে যাচ্ছে আপন গন্তব্যে।
এতে সাশ্রয় হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার জ্বালানি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসডাব্লিউএস ১১ জুন ইউএমএলের কাছে জাহাজটি হস্তান্তরের পর ১৬ জুন থেকে ইউরোপীয় সমুদ্রপথে ‘ব্র্যান্ডস হ্যাচ’ চলাচল শুরু করছে।
ডিজেল চালিত বিশাল ইঞ্জিনের গতানুগতিক ব্যবহার কমিয়ে চীনের পরিবেশবান্ধব এ জাহাজ ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রভাবশালী সব দেশের নজর কেড়েছে। ২৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৪৪ মিটার প্রস্থের জাহাজটি প্রথমে দেখলে মনে হবে এ যেন ভাসমান কোনো ভবন! যা আয়তনে কয়েকটি ফুটবল মাঠের সমান।
এর সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, এতে রয়েছে তিনটি ৪০ মিটারের বেশি উঁচু ‘স্মার্ট-সেইল’ যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতাসের গতিপথ বুঝে জাহাজের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, যা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়। আর প্রতিকূলে চলার সময় ইঞ্জিনের জ্বালানি ব্যবহার করে এটি পৌঁছে যায় গন্তব্যে।
লং রেঞ্জ টু (এলআর টু) খ্যাত ব্র্যান্ডস হ্যাচ প্রতিবার যাত্রায় পরিবহণ করতে পারবে প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। কিন্তু এর বিস্ময় এখানেই শেষ নয়। এর বায়ু-সহায়ক প্রযুক্তি দৈনিক জ্বালানির ব্যবহার প্রায় ১৪.৫ টন এবং দৈনিক কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ৪৫ টন কমিয়ে আনছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বছরে এতে প্রায় ১২ শতাংশ জ্বালানি খরচ কমবে এবং কার্বন নিঃসরণ কম হবে ৩,৮০০ থেকে ৫,০০০ টন, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এক বিশাল অগ্রগতি। এতে প্রতি বছর এই জাহাজ ব্যবহারে সাশ্রয় হবে প্রায় দেড়শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
গ্রিসের ঋণদাতা সংস্থা পাইরেউস ব্যাংক অত্যাধূনিক এ জাহাজ নির্মাণে অর্থায়নের কথা জানালেও বিনিয়োগের পরিমাণ জানায়নি। তবে চীনের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিশাল এই জাহাজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো।
বাতাসের শক্তিতে ছুটে চলবে জাহাজ, যা এক সময় দিবাস্বপ্ন মনে হতো, চীনের প্রকৌশল দক্ষতায় আজ সেটিই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। জ্বালানিভিত্তিক শক্তির বিকল্প খুঁজতে গিয়ে বিশ্ব যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চীনের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে বাতাসই হতে পারে আগামীর জাহাজ চালনার অন্যতম মূল শক্তি। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.