চিকিৎসক না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে রোগীদের চরম ভোগান্তি

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চিকিৎসক ও অন্যান্য স্টাফ বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির আওতাভুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে না থাকায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে জেলার হাজার হাজার চক্ষু রোগী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ ও দরিদ্র মানুষকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষে সরকারী অর্থায়নে গড়ে উঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের এমন অবস্থায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছে জেলার মানুষ।

ব্যক্তিগত স্বার্থ পুরণ করতে না পেরে এবং আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছোচারিতা ধামচাপা দিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের কমিটি গঠন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ‘চিকিৎসক ও স্টাফ হীন অবস্থায় হাসপাতাল মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এবং শত শত রোগীর চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া’ ষড়যন্ত্রকারী ওই মহলটির এটি আরও একটি ষড়যন্ত্র কিনা, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।

সব ঠিকঠাক চলছিল, চিকিৎসক ও স্টাফ সকলই ঠিকমতই অফিস চালাচ্ছিল। যখনই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারীদের মনোনীত কমিটির লোকজন, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় পদে অধিণ্ঠিত থাকতে পারলেন না, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের সেবার এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তাহলে, বিষয়টি স্পস্ট, তাদের আমলে নিয়োগ দেয়া চিকিৎসক বা অন্যান্য স্টাফরা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে রোগীদের জিম্মি অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে আবারও নিজেদের ক্ষমতা বা স্বেচ্ছাচারিতা প্রমান করতে চাই, এমনই প্রশ্ন সাধারণ রোগী ও বিশিষ্ট জনদের মধ্যে।

এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারীদের হাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার লক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব সোপর্দ করে বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয়াও হয়। এই কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে হাসপাতালের অচলাবস্থা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালে রোগীর সমাগম থাকলেও থাকেনা চিকিৎসক। এনিয়ে জেলা জুড়ে ভুক্তভোগী রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালটির কমিটি নিয়ে ব্যাপক কোন্দল আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারনে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শতশত রোগী। চরম ভোগান্তি আর হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

প্রায় এক মাস ধরে কোন চিকিৎসক হাসপাতালে আসছেন না। কিন্তু কেন আসছেনা তা সঠিক জানাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের অপেক্ষায় বসে আছে অর্ধশত রোগী। এরকম চিত্র আজকের শুধু নয়, এটা প্রতিদিনের মত বলে জানান ভুক্তভোগী এক রোগী। রহনপুর থেকে আসা রহিমা বেগম নামের এক রোগী জানান, আমি অসহায় মানুষ। রাস্তা খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু হাসপাতালে পাঁচ দিন এসেও ডাক্তারের সন্ধান পাচ্ছি না।
শহরের মজিদ নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমি রমজান মাসের প্রথম দিকে এসে আমার মেয়ের চোখ চিকিৎসা করিয়ে যায়। তারপর ডাক্তার বলেছিল ঈদের এক সপ্তাহ পরে অপারেশন করে দিবে। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় ঈদের পরে চারদিন থেকে ঘুরেও ডাক্তারের দেখা মিলেনি।

চক্ষু হাসপাতালের কর্মরত স্টাফ আঞ্জুয়ারা খাতুন জানান, আমি এই প্রতিষ্ঠানে দুই বছর যাবৎ কর্মরত আছি। আজকের এই ডাক্তার সংকট ও দুর্দশার কারণ হলো কমিটি নিয়ে দুই গ্রুপের কোন্দল। এই কোন্দল দূর করে প্রশাসনিক ভাবে পরিচালনা করলে হয়তো রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পেতে পারে।

এব্যাপারে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের বর্তমান আহবায়ক কমিটির প্রধান আবু হায়াত রহমতুল্লাহ্ জানান, কিছু অজ্ঞাত কারনে চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসছেনা। চলতি মাসের শেষের দিকে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে পুনরায় সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে সম্প্রতি কমিটির সকলকে নিয়ে বসে আলোচনা হয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.