“চা চাষে সোমার স্বপ্ন’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। নারীরা আজ সাফল্যের পতাকা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক মেধা আর শ্রম। তেমনি লালমনিরহাট জেলায় প্রথম চা বাগান করিয়ে গোটা জেলায় আলো ছড়াচ্ছে স্বাবলম্বী নারী শাহানারা বেগম সোমা। সেই আলোয় উদ্ভাসিত অনেকে শুরু করেছেন চায়ের চাষ। শখ করে নিজের নামে বাগান টির নাম রেখেছেন সোমা টি এষ্টেট।
এক সময়ের তামাক অধ্যুষিত এলাকা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় এখন তামাকের চাষ ছেড়ে চা চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা। দেশের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি চা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট জেলাও। তামাকের চেয়ে কম পরিশ্রম ও লাভজনক হওয়ায় এখন চা চাষ করছেন জেলার কৃষকরা। তবে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সহযোগিতায় জেলার হাতীবান্ধায় সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড নামে একটি প্রসেসিং কারখানা গড়ে উঠলেও বিদ্যুৎতের লো-ভোল্টেজের অজুহাতে তা বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে এসব কৃষকদের। ফলে পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় গড়ে তুলেছে একটি চা চারার নার্সারি। এবং কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন চা উন্নয়ন বোর্ড। জেলায় ৫২ জন কৃষক ৭২.৮২ একর জমিতে চা বাগান গড়ে তুলেছেন। আরো ২০ জন কৃষক চা বাগান গড়ে তুলতে চা বোর্ডে চা চাষি হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। সব মিলে এ পর্যন্ত জেলায় ৭২ জন কৃষক চা চাষে এগিয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে চায়ের চারা রোপন করতে মোট খরচ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। লালমনিরহাট জেলায় ১ বছরের মধ্যেই ওই চা গাছ থেকে চায়ের কাঁচা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। ফলে প্রতি বিঘায় ১ম বছর ৪ হাজার টাকা, ২য় বছর ১৬ হাজার টাকা, ৩য় বছর ৩৪ হাজার টাকা, ৪র্থ বছর ৪৮ হাজার টাকা ও ৫ম বছর ৬৮ হাজার টাকার সবুজ কাঁচা চা পাতা বিক্রি করা সম্ভব। এক গাছে কম পক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ বছর ধরে চা পাতা উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বছর এক সাথে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা খরচের পর পরবর্তী প্রতি বছর আয়ের ২০ শতাংশ পরিচর্যাসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামের চা চাষী আবু বক্কর বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আগে এসব জমিতে তামাক ও ভুট্টা চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হতো কিন্তু চা বাগানে একবার চারা রোপণ করে পরিচর্যা করলেই কম খরচে অনেক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই তামাক চাষ ছেড়ে প্রাথমিক ভাবে ৫০ শতক জমিতে চা বাগান করেছি। আশা করছি এ বছরেই আমি চা পাতা বিক্রি করতে পারব।
পারুলিয়া এলাকার চা বাগান মালিক বদিউজ্জামান ভেলু ও গোতামারী এলাকার বিশ্বজিত বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কম পরিশ্রমে ও কম খরচে চা চাষ করে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। তবে জেলার হাতীবান্ধায় টি প্রসেসিং কারখানাটি বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রথমত বিদ্যুৎতের লো-ভোল্টেজ সমস্যার কারণে কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কারখানাটি তৈরীর সময় বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক মোট খরচের ৪৯ শতাংশ ব্যয়ের দায়িত্ব নিয়ে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। মালিক পক্ষ ব্যয় করবেন ৫১ শতাংশ টাকা। কিন্তু পরবর্তী ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেয় শিল্প ব্যাংক। বাকি ৪২ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হয়নি তাকে। ফলে অর্থের অভাবে টি প্রসেসিং কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ অঞ্চলের চা বাগানের স্বপ্নদ্রষ্টা সোমা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, প্রথম দিকে তিনি অনেকটা শখ করেই চায়ের বাগান করেন। সেই শখই তাকে একদিন চা শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখায়। লালমনিরহাটে চা শিল্পের পুরোপুরি বিকাশ ঘটলে দেশের অর্থনীতিতে তা যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে জেলাবাসীর আর্থসামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডর লালমনিরহাট জেলা প্রকল্প পরিচালক আরিফ খান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এ এলাকার চাষিদের চা চাষে আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যেগে ৩ বছর আগে সিঙ্গিমারী বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি নার্সারী করা হয়েছে। এখান থেকে চাষিদের স্বল্প মূল্যে চায়ের চারা সরবরাহ এবং চাষিদের চারা রোপন ও পরিচর্যাসহ সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।চা চাষে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.