চার মাস ধরে বন্ধ কুয়েট, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত—সমাধান এখনো অনিশ্চয়তার ঘোরে

খুলনা ব্যুরো: টানা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর একাডেমিক কার্যক্রম। প্রশাসনিক স্থবিরতা, ভাইস চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতি এবং শিক্ষক সমিতির অনড় অবস্থানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
বিশেষ করে যারা সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন, তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকেরাও।
সোমবার (২৩ জুন) বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. সাহিদুল ইসলাম।
সভা শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ফারুক হোসেন বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে আমরা সরকারের কাছে দ্রুত ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় ভিসি প্রয়োজনীয়, তাই ক্লাস আপাতত চালু হচ্ছে না।”
সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. নুরুন্নবী মোল্লা বলেন, “আমরা শুরু করতে চাই, কিন্তু একজন দায়িত্বশীল লিডার ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। কে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুমোদন দিবে? কে ক্লাস শুরুর তারিখ নির্ধারণ করবে? ভিসি ছাড়া এগুলো সম্ভব নয়।”
একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়:
“১০১তম সিন্ডিকেট সভায় ৪ মে থেকে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা সেশনজটে পড়েছি। এখন আপনি (রেজিস্ট্রার) সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়ান এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত কার্যকর করুন।”
এক শিক্ষার্থী বলেন, “দুই বছরেও স্নাতক শেষ হয়নি। প্রজেক্ট, থিসিস সব থমকে আছে। পরিবার, সমাজ, চাকরি—সব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে।”
রাজশাহী থেকে এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, “কুয়েটের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি ফোন ধরেন না। আমাদের সন্তান মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। আমরা কোনো আশ্বাসও পাচ্ছি না।”
২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে এক চিঠিতে দাবি জানিয়েছে, ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত বেতন-ভাতা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখার বিকল্প নির্দেশনা দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ফোন করে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর অনুরোধ জানালেও শিক্ষক সমিতি তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
চার মাস ধরে স্থবির কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের জীবনকেই সংকটে ফেলেনি, বরং দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা বলছেন—ভিসি ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়ার সাংবিধানিক কাঠামো নেই, অথচ শিক্ষার্থীরা বলছেন—সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই—এই প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.