চাঁপাইনবাবগঞ্জ -২ উপনির্বাচন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা-নিজ ঘরের আগুনে পুড়ছে আওয়ামীলীগ

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীরা তাদের প্রচারণার মাত্রাটা ঠিক ততোটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রার্থীরা দিনরাত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বিভিন্ন গানের ছন্দে তৈরি করা হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারের ব্যবস্থা। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকযোগে চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা।
এছাড়া নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে চলছে গণসংযোগ,খন্ডখন্ড মিছিল,পথসভা ও জনসভা। মাঝেমাঝে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থনে মটরসাইকেল মিছিলও দেখা যাচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ৪৪ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মুহা, জিয়াউর রহমান। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার। তার প্রতিক আপেল।
এছাড়া আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু মাথল প্রতীকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপর তিনজন প্রার্থী হলে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, বিএনএফের নবিউল ইসলাম (টেলিভিশন) ও জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা (গোলাপফুল)।
প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামীলীগের জিয়াউর রহমান ও আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী মোহাম্মদ আলী সরকার। পাশাপাশি রয়েছেন আওয়ামীলীগের অপর বিদ্রোহী খুরশিদ আলম বাচ্চু। আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকরা মনে করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দেয়ায় তাঁদের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
মোহাম্মদ আলী সরকারের নজর আওয়ামীলীগের বঞ্চিত নেতাকর্মী এবং বিএনপি ও জামায়াতের সাধারণ ভোটারদের দিকে। তাদের বক্তব্য ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক হলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। অপরদিকে খুরশিদ আলম বাচ্চু আঞ্চলিকতা ও পুরোনো ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এগোচ্ছেন।
এদিকে, এলাকায় জোর কানাঘোষা চলছে সদ্য পদত্যাগী বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম গোপনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারের সাথে গোপনে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের পর তার অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীগণ মোহাম্মদ আলী সরকারের আপেল প্রতিকের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বিএনপির অপর অংশ নিবার্চন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। এসব বিষয় নিয়ে অত্র নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়।
তবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চাননা বিএনপি কিংবা জামায়াতের কোনো নেতাকর্মী যাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তারা বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে সতর্ক করে দিচ্ছেন। অতিসম্প্রতি গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ূন রেজা ও গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন মন্ডল তাদের বক্তব্যে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বারণ করেন। এনিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে কথা হয় স্বাতন্ত্র প্রার্থী খুরশিদ আলম বাচ্চুর সাথে, তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটারদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। ইনসাল্লাহ নির্বাচনে জয়লাভ করবো।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রাার্থী আপেল প্রতিকের মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, এই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকাবাসী আমাকে নির্বাচিত করবে। আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউর রহমান বলেন, আওয়ামী সরকারের উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিতে এই আসনে নৌকার বিজয় ছাড়া কিছু ভাবছে না এলকাবাসী।
আগামী ০১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এই উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮০ টি। এর মধ্যে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম, নির্বাচন সামগ্রী সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে ভোটের আগের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রিইজাইডিং ও পুলিং অফিসারদের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খান বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় প্রস্তুত থাকবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.