চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসন ধরে রাখতে চাই আওয়ামীলীগ ॥ পুণরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ স্থলবন্দর, ঐতিহাসিক গৌড়ের সোনামসজিদ অবস্থিত এই সংসদীয় আসনে। ভোটের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এই আসনটি আবারও আওয়ামীলীগের দখলে ধরে রাখতে চাই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, দীর্ঘদিনের পুরাতন দূর্গ পুণরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ৫’শ ৯৫ বর্গকিলোমিটার (২’শ ৩০ বর্গমাইল) এলাকায় ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ৪৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার ৪ লক্ষ ৭ হাজার ৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৭ হাজার ৭’শ ২৬ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩’শ ১৯ জন। এই আসনটি জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত হওয়ায় স্বাধীনতার পর থেকে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ধরে রাখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম সংসদ নির্বাচনে আসনটি দখলে নেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। এরপর ২০১৪ সালে এই আসনে গোলাম রাব্বানী আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী হওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন। আসন্ন ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪ জন প্রার্থী।

আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধের মাঠে লড়াই করছেন প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা ডা. মঈনুদ্দিন আহমেদ (মন্টু ডাক্তার) এর ছেলে নতুন মুখ ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এই আসনের ৪ বারের সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিয়া প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনএফ’র প্রার্থী টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নুরুল ইসলাম জেন্টু এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এর প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন মনিরুল ইসলাম মনিউর। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে জমে উঠেছে নির্বাচনী এই আসনটি। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ এবং উন্নয়নের বার্তা নিয়ে সকল দলের প্রার্থীরাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে, উপজেলা জুড়ে ভোটের হওয়া সাধারণ ভোটারদের মাঝে বইতে শুরু করেছে। ভোটাররা ভাবছেন একজন সৎ, যোগ্য ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে, সন্ত্রাস, মাদক নির্মুলে কাজ করবে, এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তারা।

এদিকে, দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আবারো আসনটি ফিরিয়ে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ৪ বারের সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিয়া। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগ চাইছে আবারো আসনটি ধরে রাখতে। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরপর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ঝুঁড়ি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে সাধারণ ভোটারদের কাছে নিজেদের সমর্থন পেতে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিঞার কাছে নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলে, আমার নির্বাচনী এলাকা শিবগঞ্জ বিএনপির ভোট ব্যাংক। এখানে বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ ভোটার আমাকে এবং আমার দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই আমি ইতোপূর্বে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। যদি ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তাহলে আমি শতভাগ আশাবাদি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবো।

১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে গেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ১০/১২ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এতো মামলা-হামলা হলেও কারো ঝিমিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বিএনপি সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে ছিলো এবং আগামীতেও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আমার কোনো নেতাকর্মী ঝিমিয়ে যায়নি। তাদেরকে সাথে নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে, নির্বাচনী প্রচারণাকালে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের অযথা হয়রানি ও গ্রেফতার করছে। এটা প্রত্যাশিত নয়। আমি চাইবো, আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও গ্রেফতার যেনো না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হোক, এটাই চাই। আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। তাই আমার অনুরোধ, পুলিশ অযথা আমাদের নেতাকর্মীদের যেনো হয়রানি ও গ্রেফতার না করে।
বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান মিঞা বলেন, এই উপজেলার মানুষ আমাকে ও আমার দলের ধানের শীষকে অত্যন্ত ভালোবাসে, আমি বিশ্বাস করি আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবারও সংসদ নির্বাচিত হবো।
অন্য এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, আমি একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আওয়ামীলীগ মুখে যা বলে, কাজে তা করে না। এটাই বাস্তবতা।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে এবং বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে, এই জেলা অর্থকরী ফসল আম ফসলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগারসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার আম সম্পদ রক্ষার্থে ভারতে থেকে আসা আমজাত পণ্য সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করবো। আম বিদেশে বেশি বেশি রপ্তানী করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করবো। সামাজিক উন্নয়নের জন্য এ আসনে যে সব এলাকা রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ হয়নি, সে সব এলাকায় উন্নয়ন করবো। উপজেলার একটি মাত্র নন এমপিওভূক্ত কলেজ রয়েছে, গত ১০ বছরেও এমপিওভূক্ত হয়নি, সে কলেজটিকে এমপিওভূক্ত করবো। সকলের সহযোগিতা ও নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে উপজেলা থেকে সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ নির্মুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর শিবগঞ্জ উপজেলাসহ সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। শিবগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ ২০১৩ সালের মত আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি, এই উপজেলার সাধারণ জনগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবে।

ডা. শিমুল বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে সারাদেশের সাথে সাথে শিবগঞ্জ উপজেলা যা উন্নয়ন হয়ে তা অন্য কোনো সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার কাজ করতে করতে হয়তো কিছু কিছু এলাকার উন্নয়নের কাজ বাকি রয়ে গেছে, আগামীতের নির্বাচিত হলে সে সব উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হলে এই উপজেলা সর্ব সাধারণের উন্নয়নে কাজ করবো। বিশেষ করে চরাঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের যাতায়াত ব্যবস্থা করবো। যে সব এলাকায় ব্রীজ প্রয়োজন সে সব এলাকা নতুনভাবে ব্রীজ-কালভার্ট তৈরি করবো। পাশাপাশি যে ব্রীজ কালভার্ট নষ্ট হয়ে গেছে, তা নতুনভাবে আবারো সংস্কার করে রাস্তা-ঘাট চলাচলের সুব্যবস্থা করে দিবো। তিনি বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী শাসন এবং পদ্মা নদীর তীর সংস্করণ করবো। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলে সোলার প্যানেলের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পৌছে দিয়েছে বর্তমান সকার। যা আলোকিত চরাঞ্চলের আলোকসজ্জায় রূপান্তরিত হয়েছে। আমি মনে চরাঞ্চলের মানুষ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোন প্রতীকে বা ব্যক্তিকে ভোট দিবে না।

অপর এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে, সে সব তৃণমূল নেতাকর্তীদের সাথে নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কাজ করবো। তবে নির্বাচনে জয়ের মালা কে পরবে এটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটের দিন পর্যন্ত। এছাড়া অপর দুই প্রার্থীরাও নিজেরদের সমর্থন পেতে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত পার করছেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে এই আসনে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী ব্রি. অব. এনামুল হক, বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক শাহজাহান আলী মিঞা ও ২০০৬ সালের কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গণফোরামের প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রি. অব. এনামুল হক এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. গোলাম রাব্বানী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.