চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে অভিনব কৌশলে যাচ্ছে মাদক \ প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: নানা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে চোরাকারবারি ও মাদক কারবারিরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নিত্য নতুন কৌশলে মাদক পাচার করছে দেশে বিভিন্ন স্থানে। একের পর এক অভিনব কায়দায় পাদক পাচার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
কৌশলগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে ধরা পড়লেও মাদকের পাচার রোধ হচ্ছে না। কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা মাদক পাচার বন্ধে, এমনটায় মনে করছেন সচেতন মহল। দিন দিন কৌশল পাল্টিয়ে দরিদ্র মানুষদের কাজে লাগিয়ে মাদক পাচার করছে, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা। আড়ালে থেকে মাদকের কারবার করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে হচ্ছেন টাকার মালিক।
অবৈধ পন্থায় টাকা কামিয়ে সম্পদের মালিক হয়ে নিজেকে বিশাল ক্ষমতাবান মনে করছেন এবং বিত্তবানও বনে যাচ্ছেন। আর অবৈধভাবে অর্থ কামিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় এদের কাছে সমাজের বিবেকবান মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়ছে দিন দিন।
এসব মাদক কারবারীর হোতাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে, এমনিতেই সমাজের তরুণরা ধ্বংসের দিকে চলেই গেছে, যেটুকু আছে, সেটুকুও হারিয়ে সমাজে দূরবস্থার সৃষ্টি হবে বলেও মতামত বিশিষ্ট জনদের।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস দ্বিতীয় দফায় বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটার পর এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে বাংলাদেশে চলছে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন।
বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের বর্ডার সীমান্তে কড়া নজরদারি ও নিয়মিত টহল জোরদারের কারণে, সীমান্ত পথে চোরাকারবারিরা আর সেভাবে যাতায়াত করতে পারছে না। এতে মাদকের যোগান কিছুটা হলেও কমেছে।
তবে, করোনার মধ্যেও থেমে নেই মাদক কেনা-বেচা। আর এসব কেনা-বেচা হচ্ছে মাদকের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা, খাসের হাট, তেলকুপি, আজমতপুর, সোনামসজিদ, জলবাজার, তর্তিপুর ঘাট, চেয়ারম্যান মোড়, শেখটোলা, তালপট্টিসহ বিভিন্ন জায়গায়। এসব এলাকায় চলছে অবাধে অবৈধ মাদকের রমরমা ব্যবসা। এছাড়াও জেলা শহরের নানা স্থানসহ মফস্বল এলাকার বিভিন্ন বাজার ও গ্রামেও মাদকের বেচা-কেনা চলছে।
সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্তে¡ও মাদক কারবারি ও ব্যবসায়ীরা থেমে নেই মাদক পাচারের কাজে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সিন্ডিকেট নিয়মিত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সীমান্ত ঘেঁষে বিস্তীর্ণ অঞ্চল, প্রতিদিনই ভারত থেকে এসব মাদকদ্রব্য অবৈধ ও চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে দেশে পাচার হয়ে আসছে। অত্র এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তির সিন্ডিকেটে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এসব সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী।
তবে অতীতে যে ভাবে মাদকদ্রব্যগুলো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশের মধ্যে আসতো, এখন তা অনেকটা কমে গেছে। যার ফলে মাদকদ্রব্য গুলো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে। একেকটি মাদকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপরও মাদকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান বাজারে একটি ফেন্সিডিল এর দাম ১,৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা। কোথাও আবার ২ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। মাস দুয়েক আগে এর দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। দাম বেড়েছে ইয়াবা, হেরোইন, মদ, প্যাথেডিন ইনজেকশন, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদক এর কাছে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা।
বিভিন্ন বয়সের মাদকসেবিরা একসাথে হোন্ডা ও প্রাইভেট গাড়িতে করে এসে মাদক সেবন করছেন বিভিন্ন স্পটে। প্রতিবেদক বিভিন্নস্থানে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় গোপন রেখে মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাদক ক্রয় করেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। টাকা থাকলে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যে কোন মাদক।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা যে ভাবে মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে, বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে উদ্ধার করতে না পারলে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে, সেই সাথে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মাদকের ছোবলে নষ্ট হয়ে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পরেও থেমে নেই মাদকের রমরমা ব্যবসা। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে অনেক মাদক ব্যবসায়ী মাদকসহ ধরা পড়ার পরেও জামিনে বের হয়ে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিত্য নতুন মাদক ব্যবসায়ী দিনদিন গড়ে উঠছে।
আগের তুলনায় মাদক ব্যবসা আরও সহজ হয়ে গেছে, আগে মাদক সেবন করতে গেলে স্পটে যেতে হত। কিন্তু বর্তমানে মাদকের লেনদেন কোথায় হবে তা মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতা মোবাইলের মাধ্যমে ঠিক করে নিচ্ছেন। যার কারণে মাদকের স্পটগুলো এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই।
এ ছাড়াও ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্যমেও খুচরা ও পাইকারি মাদক বেচাবিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গার অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবি প্রশাসনের হাতে মাদকসহ আটক হচ্ছেন। তারপরেও কোনভাবেই থামছে না মাদকের এই রমরমা ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে মাদক বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদক, এই বিষয়ে তদন্ত করে এর প্রমাণও পেয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মাদক স্পটে শিশুদের দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকদ্রব্য মাদকসেবিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মাদকগুলো। এ ছাড়াও সীমান্ত থেকে বিভিন্ন পন্থায় মাদক চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাদক ব্যবসায়ীরা সোর্স বা পাইট (লেবার) দিয়ে মাদকের চালান আনা-নেয়া করছে।
মোটর সাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কি, সীটের নীচে, ইঞ্জিনের ভেতর, মবিলের জারকিনের ভেতর, গ্যাস সিলেন্ডারের ভেতর, স্টীলের তেলের জার, শরীরে বিশেষ কায়দায় ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আইনশৃঙ্খলার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিত্য নতুন কৌশলে পাচার হচ্ছে। এ ছাড়াও বাইকে নারী ও শিশু নিয়ে পাচার হচ্ছে মাদক। অনেক সময় মুরগির ভুটভুটি, মাছের ট্রলি বা বাইসাইকেলও মাদক চলে যাচ্ছে অন্য খানে। এ সব পন্থা অবলম্বন করলে কেউ সন্দেহ করতে পারে না, যে মাদক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভারত সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন জায়গার বেশ কিছু সংখ্যা দুষ্কৃতিকারী কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে এলাকায় বসবাস করছে। এরা বিভিন্ন চোরাকারবারির সাথে জড়িত। মূলত তারাই দিনের পর দিন যুব সমাজকে ধ্বংস করছে।
প্রতিনিয়ত প্রত্যেকদিনই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার যোগে মাদকসেবীরা মাদকসেবনের জন্য আসে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরক্তে অতিষ্ঠ থাকে এলাকার সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
মাদক সেবনের পর মাদক সেবীরা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এলাকার উঠতি বয়সী মেয়েদের প্রায় ইভটিজিং করে। ভয়ে তারা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। শুধু মাদকের নিরাপদ ঘাঁটি নয়, এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন অপরাধও সংঘঠিত হয়। মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও অপরাধীদের কাছে এইসব এলাকা নিরাপদ জায়গা।
স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় দির্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার মাদকের বেচা-কেনা হয়ে আসছে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অনেকেই আজ সংসার এবং সমাজ ছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাদকের কোন সুফল নেই। যার শেষ ঠিকানা ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
এমন অবস্থা থেকে জেলা তথা জাতিকে সু-রক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটায় আশা আতংকিত, হতাশাগ্রস্থ, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অভিভাবক ও জেলার সচেতন মানুষ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.