বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেড বাস্তবায়নসহ ৫ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রবিবার (০৫ অক্টোবর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলন হয়।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘বাসমাসিস’র রাজশাহী অঞ্চলের কোষাধ্যক্ষ ও হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাসির উদ্দীন।
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, সরকারি মাধমিক সহকারি শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে ৪ স্তরীয় পদ সোপন, অনতিবিলম্বে আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা সংরক্ষণ এবং মাধ্যমিকের সকল কার্যালয়ের স্বাতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষা, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সকল শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন, বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেলের মঞ্জুরিকৃত আদেশ প্রদানের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা নিরসনকল্পে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা এবং একটি আধুনিক সময়োপযোগী পদসোপান সৃষ্টিসহ মাধ্যমিকের নানাবিধ সমস্যার সমাধান কল্পে ৫ দফা দাবি জানাচ্ছি।
আমাদের বিষয়গুলো মিডিয়াকর্মীদের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত জনতার সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের জন্য পদোন্নতিযোগ্য পদ মাত্র ৪%। যৌক্তিক কোনো পদসোপান না থাকায় দীর্ঘ ৩২/৩৩ বছর চাকুরী করেও অধিকাংশ শিক্ষককে পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যেতে হয়। পদোন্নতি অনিয়মিত বিধায় বেশকিছু পদ খালি পড়ে থাকে। যা পদোন্নতি বঞ্চিতদের হতাশ করার পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। সরকারি মাধ্যমিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ প্রাপ্য বকেয়া টাইমস্কেল, পদমর্যাদা, পদোন্নতি, পদায়ন সহ চাকুরির বিভিন্নক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সরকারি মাধ্যমিকে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন জরুরী।
মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ৫ (পাঁচ) দফা দাবী বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি। দাবীগুলো হচ্ছে-স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা। সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে ৪ (চার) স্তরীয় পদসোপান।
অনতিবিলম্বে আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা সংরক্ষণসহ মাধ্যমিকের সকল কার্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষা। বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সকল শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন এবং বকেয়া সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল এর মঞ্জুরী আদেশ প্রদান।
সম্মেলনে আরও তুলে ধরা হয়, শিক্ষাক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ স্তর। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ৯টি বিভাগীয় কার্যালয়, ৬৪টি জেলা শিক্ষা অফিস, ৫১৬টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, ৬৮৬টি সরকারি কলেজ, ৭০৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৪টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ৫টি উচ্চ মাধ্যমিক টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২টি এর মধ্যে স্কুলের সাথে কলেজ রয়েছে ১৫১৪টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ২,৯৩,২৮৯ এবং ৯০,৬৩,৪২২।
সারাদেশের মাধ্যমিক স্তরের অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী, জনবল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখভাল করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মাত্র ১ জন উপপরিচালক ও ২ জন সহকারী পরিচালক আছেন। বিশাল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হিমসিম খাচ্ছে। “স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর” প্রতিষ্ঠা করা হলে কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে যা বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে ইতোপূর্বে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের জন্যে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল যা আলোর মুখ দেখেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের সকল জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষা প্রশাসনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে দুইটি পৃথক অধিদপ্তর যথাক্রমে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং ‘উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ গঠনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের জানুয়ারি ২০২৫ এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শিক্ষা সার্ভিসের সংস্কারের জন্য বিশেষ সুপারিশ করা হয়েছে। “মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হতে মাধ্যমিক বিভাগকে পৃথক করে আলাদা ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা অঙ্গীভৃত থাকার কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং ক্রমেই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান হ্রাস পাচেছ। তাই এটি আলাদা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতার পরিচয় দিতে পারছে না। নানাবিধ কাজের সামাল দিতে গিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। তাই মাউশির কাজের গতি আনতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, মানসম্মত আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে ‘স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.