চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৃহবধূর চুল কেটে অমানবিক নির্যাতন ॥ থানায় মামলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: যৌতুকের দাবিকৃত টাকা না পেয়ে গৃহবধূর চুল কেটে অমানবিক ও অমানষিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের শেখপাড়ায় (পিয়নপাড়া) এঘটনা ঘটে।

দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন ও মারধর করার অভিযোগে স্বামী, শশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় স্বামী রবিউল ইসলাম, শশুর ইসরাফিল শেখ ও শাশুড়ী জাইলী বেগমকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন এক সন্তানের জননী চাঁদনী খাতুন (২৪)।

সামর্থ্য না থাকায় যৌতুকের টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় বুধবার বিকেলে মারধরের একপর্যায়ে অপমান ও মানহানির জন্য কাঁচি দিয়ে চুল কেটে নেয় মহারাজপুর পিয়নপাড়া গ্রামের মো. এমরাজ শেখের মেয়ে মোসা. চাঁদনীর বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মামলা ও চাঁদনীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে চাঁদনীর সাথে বিয়ে হয় একই গ্রামের ইসরাফিল শেখের ছেলে মো. রবিউল ইসলামের (৩৫)।

বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য চাঁদনী ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকে রবিউল ও রবিউলের পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে বিয়ের ১ বছর পর ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে রবিউল এবং তার বাবা ইসরাফিল শেখ ও মা জাইলী বেগম।

এরপর মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে ৫০ হাজার টাকা দেয় চাঁদনীর বাবা-মা। বাকি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী রবিউল।

নির্যাতনের শিকার চাঁদনী খাতুন জানায়, বিভিন্ন সময়ে নানা অযুহাতে টাকার দাবিতে মাদকাসক্ত হয়ে রাতে বাসায় ফিরে মারধর করতো স্বামী রবিউল।

নির্যাতনের কারনে দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়িতে বাস করি। গত বুধবার শশুর বাড়িতে গেলে সারাদিন নানা গালমন্দ করে শশুর, শাশুড়ি ও স্বামী। চাঁদনী আরও জানায়, আমার দিনমজুর বাবার পক্ষে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব নয়।

বিষয়টি জানালে বুধবার বিকেলে শশুর-শাশুড়ির যোগসাজশে চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক মারধর করে রবিউল। একপর্যায়ে অপমান ও লাঞ্ছিত করতে কাঁচি দিয়ে চুল কেটে নেয় স্বামী রবিউল ইসলাম।

চাঁদনী আরো জানায়, এমন অমানবিক নির্যাতনের পর বাধ্য ও নিরুপায় হয়ে বাবার বাসায় চলে এসেছি। এমন অমানবিক ও অমানষিক নির্যাতনের বিচার চাই।

নির্যাতনের শিকার চাঁদনীর বাবা মো. এমরাজ শেখ বলেন, বিয়ের পর হতেই আমার মেয়েকে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করতো এবং অমানষিক নির্যাতন চালাতো। মেয়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছি।

কিন্তু নির্যাতন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাঁদনীকে বার বারই নিয়ে যায় রবিউল। মেয়ের সুখের কথা ভেবে ধারদেনা করে যৌতুকের দাবীর ৫০ হাজার টাকা দিতে পেরেছি, অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ আমি, বাকি টাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি।

এখন আরো ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং মেয়ের উপর অমানষিক নির্যাতন চালাচ্ছে রবিউল ও তার শশুর-শাশুড়ি। চাঁদনীর মা ডুমিয়ারা বেগম জানান, জামাই রবিউল রাজমিস্ত্রীর কাজ করে, যা আয় করে, সব গাঁজা-মদ খেয়ে শেষ করে দেয়।

তাই সংসার ও কিস্তি চালাতে গিয়ে বাড়িতে ফিরে মেয়ে চাঁদনীকে টাকার চাপ দেয় এবং মারধর করতো। দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। শেষে নির্যাতন করে আমার মেয়ের চুল পর্যন্ত কেটে নিয়েছে পাষন্ড রবিউল, আর সহযোগিতা করেছে রবিউলের বাবা-মা।

পলাতক থাকায় রবিউল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে মামলা হয়েছে। প্রেক্ষিতে রবিউলের মা জইলী বেগমকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত কাজ ও অভিযুক্ত আসামীদের আটকের চেষ্টা চলছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.