চাঁপাইনবাবগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত-২, আহত-২


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আধিপাত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে বিবাদমান দুই গ্রæপের বিরোধের জেরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানিহাটি কলেজ মোড়ে আতর্কিত বোমা হামলা ও গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। এঘটনায় আহত হয়েছে আর ২জন। তবে এদের কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃতের স্বজনরা।
২৭ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৮ দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই নিহত আওয়ামীলীগে নেতার সমর্থকরা রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে ও আগুন জালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। আটকা পড়ে শতাধিক যান। আধাঘন্টা চেষ্টার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করে।ঘটনাটি বৃহষ্পতিবার রাত ৮ টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রানিহাটি কলেজ মোড়ের।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুস সালাম (৪৮) । তিনি সাবেক লাভাঙ্গা মোড়লটোলা গ্রামের মৃত ইত্তাজ আলীর ছেলে। অপরজন হলেন তার সহযোগী হরিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মতিন মাস্টার। আব্দুল মতিন একই ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মূত আব্দুল মান্নানের ছেলে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, মোঃ রহিম বাদশা ও আব্দুস সালাম টিটো। আহতদের প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে, হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সালামের সমর্থকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ -সোনামসজিদ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। রাস্তার উপায় পাশে শতাধিক যানবহন আটকা পড়ে। মহাসড়কে জালানো হয় টায়ার। ইট ও বাঁশের ব্যারিকেট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া মহাসড়ক। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার মো: ছাইদুল হাসান বিপিএম- পিপিএম ঘটনার পরপরই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীদের সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। পুলিশের দাবী পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রনে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছ গ্রামের কাছে আব্দুস সালামসহ কয়েকজন বসে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। দুর্বৃত্তদের হামলায় ঘটনাস্থলেই আব্দুস সালাম নিহত হন। তাঁর মুখ-মন্ডলে এলোপাতাড়ি চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিক্ষক মতিনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আরও ২ জন আহত হন।
আহতরা হলেন, মহারাজপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের এস্তাম আলীর ছেলে আব্দুর রহিম বাদশা ও রাণীহাটি ফতেপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুস সালাম টিটু। আহত টিটুও গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হসাপাতলের চিকিৎসক ডা. মিম ইফতেখার জাহান বলেন, রাত ৯ টার দিকে মতিনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর মাথা ও পায়ে গুলির চিহ্ন ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান বিপিএম-পিপিএম বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটায় দুর্বৃত্তরা। চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি চাইনিজ কুড়ালও উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নয়ালাভাঙ্গা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। এরই জেরে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকায় আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আব্দুস সালামের গাড়িতে হামলা হবার কয়েকমাসের মাথায় অতর্কিত হামলায় বৃহষ্পতিবার রাতে প্রান হারান সালাম ও তার এক সহযোগী।
প্রত্যক্ষদর্শী রহিম বাদশা বলেন, সালাম লিডার, মতিন মাস্টারসহ কয়েকজন মিলে আমরা কলেজমোড় গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এশার নামাজের সময় পশ্চিম দিক থেকে ২০ থেকে ২৫ জন মিলে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই সময় তারা বোমা ও গুলি চালায়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে রহিম বাদশা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এলাকার আশরাফ চেয়ারম্যানের লোকজন এঘটনা ঘটিয়েছে। হামলার সময় কোন রকমে পালিয়ে তিনি প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু সালাম ও মতিন মাস্টারকে তাঁরা উপর্যুপরী কুপিয়ে রেখে চলে যায়। হামলায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় সালাম। আব্দুল মতিন মাস্টারকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার বিকেলে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বিটিসি নিউজকে জানান, নিহতদের জানাযা বিকেলে সম্পন্ন হয়েছে। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এঘটনায় গ্রেফতার বিষয়ে তিনি জানান, মামলা হওয়ার পর জড়িতদের গ্রেফতারের বিষয়টি দেখা হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.