চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা এক প্রতারক চক্র ॥ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বেকার যুবক-যুবতীর কাছ থেকে নেয়া প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে এক প্রতারক চক্র। ২টি প্রতিষ্ঠানের প্রতারকচক্র চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন প্রতারণার শিকার নিয়োগ প্রার্থীরা ও অভিভাবক। এছাড়া মোটা অংকের লাভের প্রলোভন দেখিয়েও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তারাও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। নিরুপায় সাধারণ মানুষ ও বেকার যুবক-যুবতীরা এসব দূর্ণীতি ও অনিয়মের জন্য এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।

এলাকার ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, নাচোল পৌর এলাকার চেয়ারম্যানপাড়ার এশিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের পাশে “নাচোল লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল” ও নাচোল বাসস্ট্যান্ডের পুরাতন জনতা ব্যাংক এর ভবনে “বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড” নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান বেকার যুবক-যুবতীদের আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়োগের নামে জামানত হিসেবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বেশ কিছুদিন রমরমা অবস্থায় চলার পর নাচোল লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের নিকট থেকে বিভিন্ন পদের ভিত্তিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে আদায় করে। মাত্র আড়াই তিন মাসের মধ্যে ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের মাসিক বেতন না দিতে পারায় বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ওই হাসপাতালের পরিচালক ডা. তাফহিমুল ইসলাম গত ২৯ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপারকে মোবাইলে জানান যে, ১০/১২দিন থেকে হাসপাতালে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। একই দিন স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। প্রেক্ষিতে, নাচোল থানা পুলিশ ওইদিন তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নাচোল পৌর এলাকার জনৈকা মুক্তাহেদা খাতুনকে হাসপাতালের পরিচালক ডা. তাফহিমুল হোসাইন মুক্তাহেদার প্রাপ্য বেতন ও জামানতের টাকা ফেরত না দেয়ার কারণে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাচোল থানায় তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ প্রতারণার মামলায় ওই ডাক্তারকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ফলে, হাসপাতালের ৩৬জন কর্মচারী তাদের জামানত, বেতন ও মালামাল ক্রয় বাবদ দোকানের বাকী প্রায় ১৫ লাখ টাকা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে এবং প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন অফিসের স্মরনাপন্ন হয়েছেন।

অপরদিকে, চলতি বছরের গত জুলাই মাসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ১৬০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয় বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এদের মধ্যে কিছু কর্মচারীকে ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর (বিসি), ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (বিএম), ইউনিট ম্যানেজার (ইউএম) ও ফিনান্সিয়াল এ্যাসোসিয়েট (এফএ) পদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে উচ্চ বেতনে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯ হাজার ৬০০, ৭ হাজার ৩১০, ৬ হাজার ৪১০, ৫ হাজার ৫৭০ টাকা হারে বীমা খোলার নাম করে আদায় করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, নাচোল শাখার এ বীমা কোম্পানীতে প্রায় ৩ মাস পূর্বে ১৬০জন জনবল নিয়োগ করে বীমা খোলা ও উচ্চ বেতনে চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা চাঁপইনবাবগঞ্জ জোনাল অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে জনৈক কর্মকর্তা জানান। উল্লেখ্য, ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর পদে ১০ হাজার ৫০০’ টাকা, ব্র্রাঞ্চ ম্যানেজার পদের ৮ হাজার ৫০০ টাকা, ইউনিট ম্যানেজার পদে ৭ হাজার ও ফিনান্সিয়াল এ্যাসোসিয়েট পদে ৬ হাজার টাকা হারে বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ শাখার জৈনক ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর জানান, কিন্তু কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বেতনের ৫% হারে ভ্যাট কেটে বেতন দেয়া হয়েছে। বেশ কিছুদিন থেকে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নাচোল শাখার কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে এলাকাবাসী পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে।

এরই প্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাঞ্চ কো-অর্ডিনেটর হাজিডাঙা গ্রামের ফাইজুল কবির দুলাল, সোনাইচন্ডি গ্রামের জাকির হোসেন, আমনুরা সাইফুদ্দিন পাড়ার রফিকুল ইসলাম, থানাপাড়ার সায়েমা খাতুন, স্কুল পাড়ার আশা খাতুন, জোনাকীপাড়ার কেয়ামুনিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। রবিবার তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র দেখাবেন মর্মে পুলিশ তাদেরকে ওইদিন ছেড়ে দেয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স জোনাল অফিসের সিনিয়র ভিপি আব্দুল অহাব দুলাল জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনী বৈধ কাগজপত্র রবিবার সকালে নাচোল থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। যাচাই বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাচোল শাখা অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ জানান, কাগজপত্র পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও নাচোল লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল প্রায় ২০০ জন বেকার যুবক-যুবতী প্রায় ৩০ লাখ টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন ভূক্তভোগীরা।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.