চলমান আন্দোলনে বিজয় অবশ্যম্ভাবী : মির্জা ফখরুল

ঢাকা প্রতিনিধি: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যতই নির্যাতন করুক, চলমান আন্দোলনের বিজয় অবশ্যম্ভাবী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যেকোনো ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক সরকার যখন থাকে, জনগণের সঙ্গে যখন তাদের সম্পর্ক থাকে না, জনবিচ্ছিন্ন হয়। যখন জনগণ প্রতিবাদ করতে শুরু করে, তখন এ ধরনের সরকার আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়। নির্যাতন শুরু করে। ইতিহাস প্রমাণ করে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্যাতন-নিপীড়ন করে এই আন্দোলনকে দমন করা যায় না। চলমান এ আন্দোলনের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’
এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা সরকার পতনের আন্দোলন করছেন। ক্ষমতাসীনরা বলছে, আওয়ামী লীগ এত সহজ না যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী?’ জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথারই জবাব দিই না। কারণ, উনি কখন কী বলেন, জনগণ ঠিক বুঝতে পারে না। এগুলোর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নাই। কাজেই প্রমাণ হবে।’
আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন সম্ভব কি না, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুদিন আগেও বলতেন, আমরা নাকি রাস্তায় দাঁড়াতে পারি না, আমাদের নাকি কোমড় নেই। এখন এতো অস্থির হয়ে গেছেন, সব রকম শক্তি নিয়োগ করেই সরকার জনগনের ওপর অত্যাচার করছেন, নির্যাতন করছেন এই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য। তার অর্থই হচ্ছে, সরকারের এখন পায়ের তলে মাটি নেই এবং সরকার ভয় পেয়েছে। অত্যন্ত বেশি ভীত হয়েই তারা এসব আক্রমণ চালাচ্ছে।’
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটা ডিম ছাড়া কিছুই নয়; যুগপৎ আন্দোলন ব্যর্থ হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কথার উত্তর দিই না। আমার মতোই সারাদেশের মানুষ ওনার কথার কোনো গুরুত্ব দেয় না। সেটার প্রমাণ পান আপনারা উনি ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশ’’ বলার সঙ্গে সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, এটাই প্রতীকী ঘটনা ঘটেছে।’
আওয়ামী লীগকে কোনো অবস্থায় হটানো যাবে না ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যেদিন পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমপর্ণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তার আগের দিনও ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, জং জারি রায়ে গা। পতন যখন স্পষ্ট হয়, পতন যখন আঘাত করতে আসতে থাকে, পতন যখন দেখতে পায়, তখন এই ধরনের অসংলগ্ন কথা অনেক বেরিয়ে আসে।’
আপনি কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বিএনপি ব্যাকফুটে ছিল কি না, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি আরও বেশি উজ্জীবিত হয়েছে, শক্তিশালী হয়েছে। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আরও বেশি মানুষ অংশগ্রহ্যণ করেছে। এমনিতেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধ, এখন আরও বেশি উজ্জীবিত।’
গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের দিন বিএনপি তার কর্মসূচি পরিবর্তন করেছে, কিন্তু বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়ে থাকে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। বিএনপি যেসব রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বা সৌজন্যতা আছে তা পালনও করে। এখানেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য। আমরা অন্যান্য দলগুলোকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি এবং কর্মসূচি থাকলে পরিবর্তন করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আক্রমণ করে।’
গত ১১ জানুয়ারি ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের অবস্থান কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন,‘ গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই হামলা চালায়। পুলিশ সেখানে শুধু নিরব দর্শকের ভুমিকাই পালন করেনি, উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে, লাঠিচার্জ করেছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। গণঅবস্থানে একদিনে সারাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় শতাধিক এবং আহত প্রায় আড়াই শ। ফরিদপুরে পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে মামলা করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, সহ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.