চলন বিলে চলছে অতিথি পাখি ধরার মহোৎসব

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: চলনবিল অঞ্চলে অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। মাসখানেক আগে শীত মৌসুম শুরু হলেও ডিসেম্বরের শেষদিকে সাইবেরিয়া থেকে এসব পাখি এসে আস্তানা গাড়তে শুরু করেছে এই বিলে। তাদের আগমনে চলনবিলের পরিবেশ হয়েছে আরও দৃষ্টিনন্দন। ভোর থেকেই বিলের মধ্যে পাখিদের কোলাহল, কলরব, ডানা মেলে অবাধ বিচরণ, ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের ওড়াউড়ি দৃষ্টি কাড়ছে সবার। পুরো চলনবিল এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখর।
এদিকে সিরাজগঞ্জের বিল অঞ্চলে শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে দেশি ও অতিথি পাখি নিধন করছে। এতে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে ফসলি জমিতে। পাবনার যমুনা, পদ্মা নদীর চরাঞ্চলেও অল্প কিছু অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। শিকারিরা এসব পাখি ধরে বিক্রিও করছে বাজারে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলাজুড়ে বিস্তৃত চলনবিল।
বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ,উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া ও নাটেরের গুরুদাসপুর,সিংড়া উপজেলার অধিকাংশ স্থানজুড়ে এর অবস্থান। দেখা যায় সবুজের সমারোহ, বক-বালিহাঁসসহ অসংখ্য অতিথি পাখির ওড়াউড়ি, দূরের গ্রাম, জল-মাটি-মানুষসহ আরও কত কী! দিনের আলোতে চলনবিল জুড়ে দলবদ্ধ অতিথি পাখির বিচরণ মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানীবিদ্যা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডক্টর নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, প্রতি বছর এই সময়ে শষ্য ও মৎস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিলে নিজেদের আহার জোগাতে বক, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, শামুককলসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। থাকে ফেব্রয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান  বিটিসি নিউজকে জানান, পরিবেশবাদী সংগঠন চলনবিল অঞ্চলে জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সদস্যরা পাখি শিকারের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে অবহিত ও গণসচেতনমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। শীত এলেই নওগাঁ, বারুহাঁস,কুন্দইল,সাতপুকুরিয়া, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ী, নিংগইন, জোড়মল্লিকাসহ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় অতিথি পাখি এসে জড়ো হয়। আর এ সময় বেড়ে যায় পাখি শিকারিদের কোলাহল। এতে বিলের সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন।
বিলপাড়ের মানুষদের অসচেতনতার কারণে ডাহুক, তীরশুল, নলকাক, ভাড়ই, রাংগাবনী, গাংচিল, রাতচড়া, হুটটিটি, হাড়গিলা, ঈগলসহ বেশ কিছু প্রজাতির পাখি বিলীন হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। বাস্তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘শীতের শুরুতেই বিলের পানি নেমে যায়। এ সময় অল্প পানিতে খাবার সংগ্রহের জন্য বিলে প্রচুর দেশি ও অতিথি পাখি আসে। এ সুযোগে এক শ্রেণির শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারি বন্দুক ও ফাঁদ পেতে প্রতিনিয়ত পাখি নিধন করছে। পাখিরা পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। প্রশাসনকে বিষয়টি একাধিকবার জানালেও পাখি নিধন বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।’ তাড়াশ ,গুরুদাসপুর, চাটমোহর ও সিংড়া অঞ্চলের বিলপাড় ঘুরে দেখা যায়, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় সেখানে অনেক বিস্তীর্ণ এলাকা তৈরি হয়েছে। তাই শত শত সাদা বক ও পানকৌড়ি সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। নাটোর শহর থেকে আসা কিছু শৌখিন মানুষ বিলের মধ্যে নৌকায় চড়ে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করছে। এ সময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে শিকার করা পাখি খাঁচায় ভরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সোহেল আলম খাঁন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘পাখি শিকার দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। এটা বন বিভাগের দেখার দায়িত্ব।’
উপজেলা বন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আইন থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে লোকবল সংকটে আমরা তা প্রয়োগ করতে পারি না। তবে পাখি নিধন বন্ধে ওই এলাকায় দু’একদিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি মোসুলতান হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.