চলনবিলে মাছের সংকট, উৎপাদন কমছে শুঁটকির


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার ৪০টিরও বেশি স্থানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুটকি উৎপাদন হচ্ছে।
বিশেষ করে বোয়াল, টাকি, চিংড়ি, শোল, টেংরা, গুচি, পাতাসি, মোলা ও পুঁটি মাছের শুটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। এরমধ্যে পুঁটি মাছের শুটকির পরিমাণ বেশি।স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এসব শুটকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে।
এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে যাচ্ছে এসব শুটকি মাছ। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রায় ৩০০ জন শুটকি উৎপাদনকারী। পাশাপাশি এসব শুটকি চাতালে কর্মরত অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নাটোর জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে যার পরিমাণ ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত মৌসুমে ৩১৯ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এবার মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ পরিমাণ শুটকি মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায় জেলার চার উপজেলায় ৪০টি চাতালে এসব শুটকি মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় ১৫টি, নলডাঙ্গায় ১৪টি, বড়াইগ্রামে ৪টি ও সিংড়া উপজেলায় ৬টি স্থানে শুটকির চাতাল রয়েছে। এতে সর্ম্পৃক্ত আছেন অন্তত ২৯৩ জন উৎপাদনকারী। আর এসব চাতালে সব মিলিয়ে কাজ করছেন অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ।
মৎস্য বিভাগের হিসেব মতে, প্রতি ৩ দশমিক ৫ কেজি কাঁচা মাছে ১ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার গড় মূল্য সময় ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতিমণ শুটকির দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পড়ে। এতে মোট উৎপাদিত শুটকির দাম দাঁড়ায় ১৭ থেকে ২০ কোটি টাকা।
স্থানীয় উৎপাদনকারীদের মতে, এবার ৫০ কোটিরও বেশি টাকার শুটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার সিংহভাগই রপ্তানি হবে ভারতে। প্রতিবছর বাড়ছে শুঁটকির দাম। উৎপাদন কম ও খরচ বেশি হওয়ায় এমনিতেই শুঁটকির বাজার অস্থির।ব ছর বছর বাড়ছে শুঁটকির চাহিদা। অথচ পাল­া দিয়ে দেশে কমছে উৎপাদন।
দেশে উৎপাদিত শুঁটকির সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় এর দামও বেশি। ফলে ক্রমশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছে এই ব্যবসা। আমদানি করা শুঁটকির মান ও দাম দুটোই কম।
চলনবিল এলাকায় ২৫০টি অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল থাকলেও বর্তমানে আছে ১২০ টি। কেননা চলন বিলের সর্বত্রই এখন মাছের সংকট ফলে কমতে শুরু করেছে শুটকি মাছের উৎপাদন।
চাতাল মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলের মাছের শুঁটকি আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
কিন্তু বর্তমানে মাছের অপ্রতুলতার পাশাপাশি শুকানো শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক সময় শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চাটমোহরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. মতিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানালেন, অগ্রহায়ণ মাসে পানি না শুকানো পর্যন্ত চাতালগুলো চালু থাকে। এসময় শুটকি শুকানোর জন্য সহস্রাধিক পরিবার চাতালগুলোতে কাজ করেন। কিন্তু আগের মত সেই কর্ম চঞ্চলতা নেই। কারণ এবার চলন বিলে পর্যাপ্ত মাছ ছিলনা। মাছের সংকটের কারণে চলতি বছর শুঁটকির উৎপাদনও কম হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, চলনবিলের মাছের সুনাম রয়েছে। এবার বর্ষার সময়টা কম ছিল। ফলে মাছের স্বল্পতা রয়েছে।
নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শুটকি মাছ এখন রপ্তানিকারক একটি পণ্য। সঠিক উপায়ে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা গেলে সারা বছরই শুটকি মাছ বাজারজাত করা এবং মূল্যও অনেক বেশি পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, উৎপাদনে আর্থিক সহায়তা বাবদ ঋণ সুবিধা, সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ ও সোলার ড্রয়ার দিতে পারলে বর্ষাকালে শুটকির পচন রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সংরক্ষিত শুটকি সময় মতো বাজারজাত করার সুযোগ পাবেন তারা। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তিনি মনে করেন এ অঞ্চলে শুঁটকি সংরক্ষণাগার ও বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.