চলনবিলে পলিথিনের নৌকায় বাড়ি যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন


নাটোর প্রতিনিধি: আকস্মিক ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংংড়া ও গুরুদাসপুরের নিম্নঞ্চলের ধানের জমিতে বেড়েই চলেছে পানি।
ইতিমধ্যে প্রায় জমিতেই হাটু বা কোমড় সমান পানি দেখা দিয়েছে। ফলে এখাননকার কৃষকদের মাঝে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়া শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক নিচু এলাকায় বৃষ্টি ও খালের পানি এক হয়ে পাকা ধান পানিতে ডুবো ডুবো ভাব। এ অবস্থায় কৃষক পাকা ধান ঘরে তুলতে অধিক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তাই তড়িঘড়ি করে জমির পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। চলনবিলের কিছু কিছু এলাকায় অল্প পানি হওয়ায় না চলে নৌকা, না চলে পাও। আবার মাথায় করে কাটা ধান ঘরে তুলতেও সমস্যা হচ্ছে। আবারর নৌকা ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই। তাই শস্যভান্ডার খ্য্যাত চলনবিলের কৃষকরা অল্প খরচে পাকা ধান কাটার পর জমি থেকে পরিবহনের জন্য এক অভিনব কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এটি হলো পলিথিনের নৌকা।
চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খরচ কমাতে অনেক কৃষক পলিথিনের নৌকায় ধান বহন করছেন। পলিথিনের একপাশ বেঁধে অপর পাশ দিয়ে বায়ু প্রবেশ করিয়ে তৈরি করা হয়েছে এসব নৌকা। এসব নৌকা তৈরিতে খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। যা অনেক সাশ্রয়ী।
চলনবিলেরর কৃষক মজির উদ্দীন ও আজিজ প্রামাণিক বিটিসি নিউজকে জানান,বাজার থেকে দুই থেকে তিন কেজি পলিথিন কিনে লম্বা করার পর ভেতরে কিছু হাওয়া ঢুকিয়ে দুপাশে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর পলিথিনের মাঝের জায়গাটায় ধানের আঁটি ভর্তি করে রাখা হয়, ঠিক যেন একটি নৌকা। আগে থেকে কিছু হাওয়া দিয়ে পানিতে এই নৌকা ভাসালেই হাওয়ায় ভারসাম্য রক্ষা করে। যতই ভর্তি করা হয়, ততই নৌকা পানিতে ভালো চলে। এ নৌকায় করে কাটা ধান হাঁটুপানি থেকে শুরু করে নদী-নালা, খাল-বিলের গভীর পানির মধ্য দিয়ে দু-চারজন কৃষক বেয়ে নিয়ে যেতে পারেন বাড়িতে। নৌকা ডুবে যাওয়ারও কোনো ভয় থাকে না।
কৃষক আশরাফ আলী বিটিসি নিউজকে জানান, নৌকার দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। পলিথিনের নৌকা তৈরির আগে কাটা ধান বহনের জন্য আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। যেমন নৌকা পাওয়া যেত না আর পাওয়া গেলেও গুনতে হতো অনেক টাকা বা ধান। প্রতিদিন নৌকাপ্রতি এক থেকে দুই মণ ধান দিতে হতো, যা কৃষকের জন্য ব্যয়বহুল। সময়ও বেশি লাগতো। আর এখন পলিথিনের নৌকা ব্যবহার করে কাটা ধান পরিবহনের জন্য অনেক সময় কম লাগে এবং ব্যয়ও অনেক কম।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ১০০ বিঘা জমিতে শুধু ব্রি-২৯ জাতীয় ধান কাটা বাকি রয়েছে। দ্রত ধান কাটা শেষ করতে ও খরচ কমাতে ১৫ টি ধানকাটার মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেষ্টার) মাঠে নামানো হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ধান কাটা সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন তিনি। পলিথিনের নৌকায় কাটা ধান পরিবহনের জন্য ভালো। যেখানে অল্প পানিতে কাঠের নৌকা চলাচল করতে সমস্যা হয়, সেখানে পলিথিনের নৌকা ব্যবহার করে সহজেই কৃষকের কাটা ধান বহন করতে সুবিধা হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.