ঘুর্ণিঝড় রেমাল: ৩ নম্বর বিপদ সংকেত, রাতেই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

খুলনা ব্যুরো: ঘুর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে উপকূলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আজ রাতেই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হবে।
শনিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় নেওয়া প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলোতে চলাচল করা লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানের ব্যাপারে এখনও এমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
শনিবার (২৫ মে) বিকেলে  এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেজন্য উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের লঞ্চ এবং নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নদীবন্দরগুলোতে চলাচল করা লঞ্চের জন্য এমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে বিআইডব্লিউটিএর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে  খুলনা জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লা ও ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ১৫ হাজার মানুষ থাকতে পারবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটেও  ৩৫৯ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেখানে আশ্রয় নিতে পারবে ২ লাখ৬৬ হাজার ৬৫১ জন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৫০৫ স্বেচ্ছাসেবক।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় প্রস্তুত রয়েছে ১৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি ত্রাণ কার্যে ব্যবহারের জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
এছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার, ওষুধ ও পানি। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ড।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ থেকে রক্ষা পেতে  প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তার পরেও এই উপলক্ষ্যে আমাদের উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনিসহ কালিগঞ্জ দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা; শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা; জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করেন; একই সঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত করা; পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুত রাখা; দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.