গ্রীস করিন্থ ক্যানেল

সিলভিয়া মশিউর: (বিশেষ প্রতিনিধি): এথেন্স থেকে কান্ট্রিসাইডে ত্রিশ মিনিটের পথ ড্রাইভ করে এক টানে চলে গেলাম ঐতিহাসিক করিন্থ খাল দেখার উদ্দেশে। ” খাল ” ! তা আবার দেখার কি আছে ? পুরোনো একটা ব্রীজ দেখেই বোঝা যায় জীর্ণ-শীর্ণ করুণ অবস্থা।যাক ! দেখি কি আছে ওতে।

ব্রীজের এপারে গাড়ি রেখে – আপা হেটে হেটে পার হতে হবে – বলেই ভাই ওবায়দুল গজ গজ করে ওপারের দিকে হাটতে শুরু করলো।পিছনে পিছনে সবাই হেটে গিয়ে ব্রিজে পা রাখতেই বুঝতে পারলাম- চিকন সরু একটা ব্রিজ , এবং কতটা যে পুরোনো তা ধারণা করা মস্কিল। ব্রীজের চারপাশে এতো নির্জনতা হঠাৎ দু একটা গাড়ি ছাড়া কিছুই চোখে পরে না।

মানুষ বলতে আমরাই কজন মাত্র । অনেকটা ভূত রহস্য গল্পের- ভৌতিক – টাইপের। কয়েক কদম হেটে – মাঝামাঝি যাওয়ার আগেই পা দুটি যেন জমে গেলো,আর একটু এগুলেই এক্ষুনি বুঝি নিচে পড়ে যাবো — কোনমতে নিজেকে গুছিয়ে তুলতে একটা মুহূর্ত লাগলো । আসলে ভয়ের কিছু নাই ,হঠাৎ দেখেছি বলেই এমনটা মনে হয়েছে।

ছোট ছোট জাহাজ পাস করার জন্য খালটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৯০-১৮৯৩ সালে। খালে খাঁটি চুনাপাথরের দেওয়াল রয়েছে, নীল সচ্ছ জলের স্তর থেকে খালের শীর্ষে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচুতে।

তবে সমুদ্রতল থেকে এটি মাত্র ৭০ ফুট প্রশস্ত। এই খাল আদতে গ্রিসকে পেলোপনেশিয়ান উপদ্বীপ থেকে পৃথক করে। যা আয়নিয়ান সাগরের উপসাগরীয় উপসাগরকে এজিয়ান সাগরের সোনিক উপসাগরের সঙ্গেও সংযুক্ত করেছে।

যাই হোক ওপারে গিয়ে একটা কফিব্রেক নিয়ে ,বিপরীত পাশ দিয়ে ফিরতেই চোখে পরলো ,ব্রীজের রেলিং এ তালা ঝুলন্ত হাজার হাজার চিরকুট। আসলে এগুলো সবই হচ্ছে— ” সুইসাইড নোট “।

কেউ চাইলে তালাবদ্ধ সুইসাইড নোট রেখে এই করিন্থ খালে নিজের জীবন নিজেই আত্মঘাতী মাধ্যমে মৃত্যু ঘটাতে পারে অনায়াসেই।নীল সাগরগর্ভে হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কোন হদিস আর মিলে না। এবংএটা গ্রীক সরকার দ্বারা অনুমোদিত। সুইসাইড নোট গুলো অধিকাংশই লেখা মুছে গেছে।

আবার কিছু লেখা একদম স্পষ্ট তার মানে এগুলো recently ঘটে যাওয়া ঘটনা। মশিউর দাঁড়িয়ে পড়া শুরু করলো , আমি ! ঐ যে আইলো ! বলেই খিচ্চা দৌড়। প্রতিবছর কত মানুষ এখানে আত্মহত্যা করে,যাদের অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী, এবং বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে । ইস!!! কি সাংঘাতিক।

প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনজন দার্শনিকের মধ্যে প্রথম সক্রেটিস , দ্বিতীয় প্লেটো শেষ এরিস্টটল । “হেমলক”গাছের রস পান করে সক্রেটিস স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন,, দার্শনিক প্লেটো’র মতে -যখন কেউ জীবন ধারণে অপারগ হন, অথবা অনিবর্তনীয় অপমানে জর্জরিত হন, তখন আত্মহত্যা করা অনৈতিক নয়. সো আমার সীমিত জ্ঞানের পরিধিতে এ আইনের কোন ব্যাখ্যা জানা নাই । তারপর এথেন্সে ফিরতে সন্ধ্যা হলো বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ,খুব ভাল লেগেছিল করিন্থ খাল আর তার ঝুলন্ত সেতু।

তবে আত্মহত্যা তাও আবার সরকারি আইনে স্বীকৃত – ভেবে মনটা আমার খুব ভারাক্রান্ত ছিল।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.