গ্রামাঞ্চলে বাঁশ শিল্পের পন্যের মূল্য কমছে বাজারের সস্তা প্ল্যাস্টিকের কাছে

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় প্লাস্টিকের দাপটে বাঁশ শিল্পের পণ্য হুমকির মুখে পড়েছে। অদূর অতীতে এ উপজেলায় প্রায় সব মানুষই বাঁশ দিয়ে তৈরি বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করতো। আর এটা সম্পন্নরুপে যোগান দিতো বাঁশ শিল্পের কারিগরেরা।
তারা ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতো। আগে গ্রামাঞ্চলে বাঁশ শিল্পের জৌলুস থাকলেও এখন রাজত্ব করছে সস্তা প্ল্যাস্টিকজাত পণ্য।
আজ বুধবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার কলেজহাটে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙ্গারী, টুকরী, চালনি, মাছ রাখার খালই, ঝুড়ি, পাখা, খৈচালন, ঢাকি, ও মুরগীর খাঁচাসহ বিভিন্ন বাাঁশের তৈরি জিনিস পত্র বিক্রি করতে আসা কারিগর ও পাইকারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে তাদের এসব বাঁশের জিনিসপত্রের  কদর নেই বাজারে আসা প্লাষ্টিকের কারণে। ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাজারে বাঁশের জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা হরি দাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘একসময় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন রকম জিনিসের কাজ চলতো এবং পরিবারের নারী- পুরুষ যৌথভাবে এসব কাজ করতেন। উৎপাদিত বাঁশ, কঞ্চি ও রশি পণ্য সাপ্তাহিক হাঁটের দিনে ক্রয় করে বাড়িতে তৈরি করে স্থানীয় উপজেলার বিভিন্ন বাজরে বিক্রির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলায় নিয়ে যেত কারিগর ও পাইকাররা। এছাড়াও বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বেচাকেনা হতো। চাহিদা কমে যাওয়ায় বাঁশ শিল্পের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ বাঁশ শিল্পের কারিগররা অপরদিকে পেশা পরিবর্তন করছে তারা। ‘
বাজারে আসা বাঁশবাড়ি গ্রামের আঃরশিদ মাষ্টার বলেন, ‘উপজেলায় বিভিন্ন  প্রজাতির বাঁশের প্রাচুর্য্য রয়েছে এবং এখনও অনেকে বাঁশের আবাদও করছে।
কিন্তু পুঁজির অভাব, শ্রমিকের দুষ্প্রাপ্যতা, বাড়তি মজুরী, প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এ সবের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ শিল্পের অনেক কারিগর ও মালিকেরা।’
উপজেলার পৌর শহরের পূর্ব দাসপাড়ার লক্ষী রাণী ও দেবেন, নেকমরদ বামনবাড়ির মুহিত রায়, ভরনিয়া গ্রামের কমল রায় এবং অনন্তপুরের সমবারু রায় বাঁশ শিল্পের কারিগররা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বাপ, দাদার চৌদ্দ পিঁড়ি থেকে পালাক্রমে এ পেশায় আমরা জড়িত থেকে কোন মতে জীবন নির্বাহ করতে হিমসিম খাচ্ছি। তবুও বংশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও লেগে আছি এ পেশায় কিন্তু বাঁশের  বিভিন্ন জিনিস পত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের উপর ঝুঁকছে লোকজন।
তারা আরো জানান, বাঁশ শিল্পের দুর্দিন কাটিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি ।
নন্দুয়ার গ্রামের আলুয়া রানী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুধুমাত্র বাপ-দাদার পেশা এখনো আগলে রাখার চেষ্টা করছি। বাঁশের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। টাকার অভাবে ঠিকমত কাজ করতে পারিনা।’
সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যেমন সম্ভব তেমনি নির্ভরযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিলুপ্তির পথে বাঁশ শিল্প অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। সেইসাথে এলাকার  অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে বলে এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকের  অভিমত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম শিল্পী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.