গোমস্তাপুরে সরকারি কবরস্থান ভূমি দস্যুর দখলে-জিম্মি ২’শ পরিবার


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফাজিলপুর গোরস্তানের প্রায় দেড়’শ বছরের পুরোনো একটি সরকারি কবরস্থান দখল করে বসতবাড়ি করার অভিযোগ উঠেছে। ৫৫ শতক জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।
অভিযোগটি একই গ্রামের মৃত আব্বুর জাব্বারের ছেলে মো. আজিজুর রহমান ও মো. সাজিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, বন্দোবস্ত করার কথা বলে গত প্রায় ৪০ বছর থেকে কবরস্থানের জমিতে বসবাস করছেন পরিবারগুলো। কিন্তু গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিস ও পার্বতীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস বলছে, ১৯৭২ সালের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এখন জমিটি সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত।
ভূমি অফিসের নথিতে এটি এখনও সরকারি কবরস্থান হিসেবেই রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কবরস্থান কোনদিনই বন্দোবস্ত হয়নি এবং আগামীতেও হবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব ফাজিলপুর মৌজার জেল নম্বর ৮৩-এর ২৯৪ নম্বর দাগে কবরস্থানের ৫৫ শতক জমির পুরোটাই দখলে রেখেছেন দুই ভাই আজিজুর রহমান ও মো. সাজিরুদ্দিন। মোট ৫৫ শতকের প্রায় ৩০ শতকে রয়েছে বাড়ি। বাকি জমি নিজেদের পারিবারিক গোরস্থান, বাঁশ ও বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে ভোগ করছেন তারা।
পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামবাসী বলছে, কবরস্থানে বাড়ি করে জোরপূর্বক দখলে রেখেছে তারা। প্রভাবশালী পরিবার হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। গ্রামবাসীর পক্ষে ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও আদালত একাধিক রায় দিলেও তা মানতে নারাজ দুই ভাই আজিজুর রহমান ও সাজিরুদ্দিন। নিরুপায় হয়ে গ্রামের ২০০ পরিবার বাড়ির পাশে ও ফসলী জমিতেই কবর দিচ্ছেন আত্মীয় স্বজনদের।
ষাটোর্ধ্ব আব্দুল খালেক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দেশে ১৯৭২ সালের পর আর কোন রেকর্ড হয়নি। সেই রেকর্ড অনুযায়ী জমিটি এখনও সরকারি গোরস্থান। অথচ সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত করার ভুয়া কাগজপত্র করে গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে কবরস্থানেই বাড়ি করে বসবাস করছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তারাই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করে। মামলায় পরাজিত হয়েও কবরস্থান ছাড়তে নারাজ দুই ভাই আজিজুর রহমান ও সাজিরুদ্দিন।
পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক (৫০) বলেন, আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে এখানে। আমরা ছোট তখন এখানে অনেক মানুষকে কবর দিতে দেখেছি। কিন্তু গ্রামবাসীকে ১৯৭৫ সালের দলিল করা হয়েছে বলে এতদিন দখল করে আছে তারা। পরে হঠাৎ আমরা জানতে পারি, ভূমি অফিসের সকল নথি ও সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এটি সরকারি কবরস্থান।
এরপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করলে তারাও গ্রামবাসীর পক্ষে রায় দেন। কিন্তু গায়ের জোরে দখল করে রেখেছে। কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৪০ বছর ধরে তারা সরকারি কবরস্থান দখল করে রেখেছে। খুব কষ্টে আছে গ্রামের ২০০টি পরিবারের ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ। কেউ বাড়ির পাশে, কেউ ফসলী জমিতে মাটি দেয়। যা অত্যন্ত কষ্টের সকলের জন্য।
কবরস্থানে মাটি দিতে না পেরে মনের মধ্যে যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করে পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামবাসী। বর্ষা মৌসুমে মৃত মানুষকে দাফন-কাফন করতে আত্মীয় স্বজনদের কষ্টের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এবিষয়ে মো. আজিরুর রহমান ওরফে আজিরুদ্দিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমার বাবা মৃত, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। আমাদের বাবা কবরস্থানটি কিভাবে কার কাছে বন্দোবস্ত করেছে, তাও জানিনা। কর পরিশোধ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির খারিজ-খাজনা করতে গেলে ভূমি অফিস তা নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তা দীর্ঘদিন ধরে বাকি আছে।
পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী খান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমার জানা মতে পূর্ব ফাজিলপুর সরকারি কবরস্থানটি অনেক দিন আগের একটি প্রাচীন কবরস্থান। এনিয়ে গ্রামবাসী ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিলে সালিশের মাধ্যমে গ্রামবাসীকে কবরস্থান ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা ছাড়তে চায়নি।
গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার নজির বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ভূমি অফিসের বিভিন্ন কাগজপত্র ও নথি দেখে এটা সুস্পষ্ট যে জায়গাটি এখনও সরকারি কবরস্থানের নামেই আছে। কবরস্থানের জায়গা বন্দোবস্ত নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ব ফাজিলপুর গ্রামের ২০০ পরিবারের জন্য এই সরকারি কবরস্থান ছাড়া আর কোন নির্ধারিত জায়গা নেই। সরকারী করস্থানটি দ্রুতই ব্যক্তি দখলমুক্ত করে পুরো গ্রামবাসীর মৃত মানুষের দাফন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা এলাকাবাসীর।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.