গুরু_জেমসের “মান্নান মিয়ার তিতাস মলম” গানটির পেছনের গল্প����


বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি: মান্নান মিয়ার তিতাস মলম গানটা নব্বইয়ের দশকে মুক্তি পায়। ‘নগর বাউল’ অ্যালবামের প্রথম গান ছিল এটি। লিখেছেন দেশবরণ্য গীতিকার, সুরকার, মডেল, কবি নাটোরের মহারাজা প্রিয় লতিফুল ইসলাম শিবলী মামা।
ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত যে ব্যক্তিকে দেখছেন তিনি সেই নাটোরের তেবাড়িয়া হাটের মান্নান মিয়া। যিনি তিতাস মলম বিক্রি করতেন। গুনী মানুষ শিবলী মামার লিখা এবং গুরু জেমসের গাওয়া এই গানটি মান্নান মিয়া বিখ্যাত করেছে ।গানটা রিলিজড হওয়ার পর আমি তেবাড়িয়া হাটে গিয়ে মান্নান চাচাকে গানটি শুনিয়েছিলাম।
তিনি প্রথমে বিলিভ করছিল না তাকে নিয়ে গান লেখা হয়েছে ।গানটা হিটও করেছে। শুনে মান্নান চাচা খুশিতে আটখানা। তিনি শিবলী মামাকে প্রানখুলে দোয়া করেছিল।
মান্নান মিয়ার তিতাস মলম-মূলত শিবলী মামার লেখা একটি কবিতা।
এই গানের লিরিকটা খেয়াল করার মত। প্রথম কারণ এই গানটায় একজন ব্যক্তি ‘মান্নান মিয়া’ এবং তার জীবিকার অবলম্বন ‘তিতাস মলম’ নিয়ে বলা হয়েছে। এই তিতাস মলমের সাথে যুক্ত করা হয়েছে সব মানুষের মন যন্ত্রনাকে। ফলে সাধারণ মান্নান মিয়া আর তিতাস মলম হয়ে উঠেছে সার্বজনীন।
প্রতি রবিবারে নাটোরের তেবাড়িয়ায় এই হাট বসে। এটা উত্তরবঙ্গের বড় কয়েকটি হাটের মধ্যে অন্যতম। এই গানের গীতিকার শিবলীর বাড়ি হাট থেকে প্রায় ১কি.মি দুরে ষ্টেশন বাজার এলাকায়। প্রতি রবিবার উনি সেই বাড়ি থেকেই ঐ হাটের মান্নান মিঞার মলমের প্রচার শুনতে পেতেন। সকাল বেলা ঘুমটাই ভাঙ্গতো ঐ মাইকের আওয়াজে। একই জায়গায় বসে ২৫ বছর ধরে এই মলম বিক্রি করছে মান্নান মিয়া। এটা বছরের পর বছর চলে যেত কিন্তু তার কথাতে কোন পরিবর্তন হত না। সব সময় ২৫ বছর-ই ছিল। তিনি ঐ হাটে বড় এক তেতুল গাছের তলায় তার এই ব্যবসা চালাতেন। এই মান্নান মিয়াকে নিয়েই গান। আমরা শৈশব থেকে শিবলী মামার মতো মান্নান চাচাকে একই জায়গায় দেখে আসছি।
কেন তিতাস মলম? এক জায়গায় বসে একটা লোক যদি ২৫ বছর একই মলম বিক্রী করে বুঝতে হবে সেই মলমে কিছু হলেও কাজ হয়। মান্নান মিয়া বিভিন্ন দেশীয় লতা পাতা, নির্যাস ইত্যাদি দিয়ে তার মলম বানিয়ে বিক্রী করতো। এই মলম এমনই কার্যকরী যে তা মনের ক্ষতও সারাতে পারে। সত্যিকার মলম এই ক্ষত সারাতে পারে কিনা সেটা সন্দেহ আছে, তবে এই দাবী যে মানসিকভাবে খুব শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে তাতে সন্দেহ নেই।
যেই মান্নান মিয়াকে নিয়ে এই গান তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এই গানটা যখন রিলিজ হল তখন মান্নান মিয়া জীবিত। আর জেমস্ তখন তুমুল জনপ্রিয়। স্বভাবতই জেমসের যারা ভক্ত এবং যারা গান শোনে তারা দলে দলে তেবারিয়ার হাটের সেই জীবন্ত কিংবদন্তীকে দেখতে যাওয়া শুরু করলো। তো মান্নান মিয়া তখন বেশ নড়েচড়ে বসলো। মান্নান মিয়ার ইচ্ছে ছিল এর গীতিকারের সাথে দেখা করার, কিন্তু নানা কারনে এটা আর সম্ভব হয়নি।
রত্যেকটা গানের পেছনে এরকম একটা ইতিহাস পাওয়া যায় – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইতিহাসটা আর জানা যায় না। মান্নান মিয়ার তিতাস মলমের কাহিনীটা যেমন জানা গেল তেমনি যদি সব গানের কাহিনীই জানা যায় তবে কেমন হতো? আমার কল্পনা শক্তির সীমাব্ধতা এখানেই উন্মোচিত হয়।
মূল লিরিক:
মন্নান মিঞার তিতাস মলম
লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রতি রোববারে তেবাড়িয়া হাটের তেঁতুলতলায়
২৫ বছর ধরে এক জায়গায় বসে
দাউদ বিখাউজ আর চুলকানি ঘায়ের
দিয়ে গেছে আরাম উপশম
মন্নান মিঞার
তিতাস মলম।
তিতাসের তীরে জন্ম যে তার
নাম দিয়েছে তাই তিতাস
দুটাকা মূল্যের এই মহৌষধ
করে চুলকানি পচরার বিনাশ।
গোপন ফর্মুলা আছে একটা
দেশীয় লতাপাতা নির্যাস
বহু শ্রমে সাধনায়
কত দিন গেছে তার বনবাস।
কোনো স্বপ্নে পাওয়া নয়
নয় কোনো উত্তরাধিকার
মন্নান মিঞার নিজের আবিষ্কার
মন্নান মিঞার নিজের আবিষ্কার।
বিনয়ী লোকটার আছে একটা
অহংকার আর গরিমা
উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে
তার মলমের যত মহিমা।
মনের কোনে লুকিয়ে রাখা
ইচ্ছেটা তার বড় অম্লান
ভালোবেসে সাবাই তাকে
ডাকুক ‘ডাক্তার মন্নান’।
নিজের বুকের ক্ষত লুকিয়ে রেখে
সারিয়ে তোলে অন্যের ক্ষত
কোনো দিনও কেউ জানবে না হায়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (নাটোর) প্রতিনিধি মো. নাসিম উদ্দিন নাসিম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.