গুরুদাসপুরে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে দ্বিতীয় চাপিলা হতে চলেছে বিয়াঘাট!

 

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে অনুমোদন ছাড়াই একের পর এক তিন ফসলি আবাদি জমিতে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিনকে দিন এর পরিমান দূর্বার গতিতে বেড়েই চলেছে। উর্বর ফসলি জমিতে পুকুর খনন করায় খাদ্যশস্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় কৃষিবিভাগ। গুরুদাসপুরের প্রতিটি এলাকাতেই প্রতিবছরেই প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই তিন ফসলি আবাদি জমিতে পুকুর খনন করায় দিন দিন আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। উপজেলার সব ইউনিয়নেই পত্যেকটি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

এতে ক্রমেই কমছে চাষের জমি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে জলবন্ধতা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে চাপিলা ইউনিয়নে অনেক মাঠ-ঘাট ছয় মাস পানিতে আটকে থাকে। আর এই চাপিলার মতই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিয়াঘাট। এলাকার সাধারন মানুষ বলছে দ্বিতীয় চাপিলা হতে চলেছে বিয়াঘাট!
বিলচলন শহীদ জোহা কলেজের প্রভাষক নাছরিন সুলতানা রুমা বলেন, বিয়াঘাটের রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবি খারাপ। মাটির গাড়ির জন্য রাস্তায় চলাই যায়না। দ্রুত অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোরদাবি জানান তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে সবুজ ফসলের সমারাহ। দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। ধানের সবুজ রং ও এর অপরুপ সৌন্দর্যে ধানের পাশেই দূর্গাপুর সুইচ গেট সংলগ্ন জায়গা চলছে তিনটি পুকুর খনন। এর একটি কাটাচ্ছেন বিয়াঘাট ইউপি পরিষদের সদস্য মো.বেলাল হোসেন শিতল। ওই একই জায়গা রাস্তার পাশে ১২ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন শফিক মন্ডল। তিনি বলেন সব তো ম্যানেজ করাই আছে। সবাই কাটছে তাই আমিও কাটতেছি। প্রশাসনের অনুমতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রশাসনের অনুমতির দরকার হয়না!

ওই এলাকাই কিছুদিন আগে ওই ইউপির চেয়ারম্যান প্রভাষক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্ব পুকুর কাটার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করলেও এখন তার পরিষদের সদস্যরাই পুকুর খনন করছেন! এবিষয়ে শিতল মেম্বার বলেন, সবাই কাটছে ভাই আমিও কাটছি কি আর করবো। সব তো ম্যানেজ করেই কাটাচ্ছি। সাধারন কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে এইসব অর্থলোভী মাটি ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা পুকুর খনন করাতে উচ্ছাহিত করছে কৃষকদের। এদিকে পুকুর খনন বন্ধে বিয়াঘাট ইউনিয়নে চেয়াম্যানের নেতৃত্বে কৃষকেরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করার ফলে বেশ কিছুদিন পুকুর খনন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে চলছে দূর্বার গতিতে।

স্থানীয় সাংসদ নিজেও একাঠিক বার মাঠে নেমে পুকুর কাটা বন্ধ করলেও থেকে থাকছে না পুকুর খনন। সর্বশেষ পুকুর খনন বন্ধে নিরুপায় হয়ে কৃষকরা কিছুদিন পূর্বে বিয়াঘাটে দুইটি এক্সকেভেটর পুড়িয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেওয়া এক্সকেভেটর মালিক আব্দুল কাদের জানান, আগে প্রশাসন মৌখিক অনুমতি দিয়েছিল তাই কয়েকটা পুকুর খনন করেছি। ঝামেলা হওয়ার পর আর গুরুদাসপুরে পুকুর কাটছি না। এক্সকেভেটর পুড়ানোর ঘটনায় সরকার দলীয় ১০জন নেতা কর্মিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন এই প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের।

যে জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে সেখানে ধান গম আখসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হতো। এছাড়াও পাশ্ববর্তী সকল জমিতেই বর্তমানে ধান আবাদ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে পুকুর মালিকরা বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুকুর খনন করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সকলকে অবগত করেই আমরা পুকুর খনন করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল করিম বলেন, গুরুদাসপুরের প্রতিটি এলাকাতেই আবাদি জমিতে পুকুর খনন চোখে পড়ছে। বিশেষ করে চাপিলা,বিয়াঘাট বেশি। অধিকাংশই তিন ফসলি জমিতে পুকুর করা হচ্ছে।

এসব ফসলি জমিতে বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। পুকুর খনন এভাবে পুকুর খনন চলতে থাকলে গুরুদাসপুরে আবাদি জমি একেবারে কমে যাবে। এতে করে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে উপজেলা এলাকা। কিন্তু কিছু অসাধু কৃষক বেশি লাভের আশায় আবাদি জমিতে পুকুর খনন করছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কে এম আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলার সরকারী পুকুর আছে ৩২টি। বেসরকারী আছে প্রায় ৫ হাজার থাকলেও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হয়েছে ৮ হাজারের বেশি।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার গণপতি রায় বলেন, আবাদি জমিতে পুকুর খনন করার কোন নিয়ম নেই। পুকুর খনন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কাউকে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারীকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ভূমি আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.