বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: তারকায় ভরা, অভিজ্ঞতায় ঠাসা এবং দারুণ সফল ম্যানচেস্টার সিটি হঠাৎ করেই যেন অন্ধকার এক গলিতে ঢুকে পড়েছে। চেনা ছন্দে এগিয়ে চলার পথেই আচমকা দলটি বন্দি হয়ে পড়েছে ব্যর্থতার জালে। সবশেষ ঘরের মাঠে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ধরাশায়ী হওয়ার পর যেন কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচে ৪-০ গোলে হারের পর গুয়ার্দিওলা তাই কোনো অজুহাত না দেখিয়ে বললেন, “আমাদের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।”
অপরাজেয় যাত্রায় এগিয়ে চলার পথে সিটির হঠাৎ ছন্দপতন হয় গত ৩০ অক্টোবর; এই টটেনহ্যামের বিপক্ষেই হেরে লিগ কাপ থেকে বিদায় নেয় পেপ গুয়ার্দিওলার দল। এরপর প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ম্যাচে বোর্নমাউথ ও ব্রাইটনের বিপক্ষে হেরে বসে তারা এবং এর মাঝে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্পোর্তিংয়ের বিপক্ষে হারের স্বাদ পায় দলটি।
আর এবার লিগে এই ভরাডুবি।
বর্তমান ফুটবল বিশ্বে অনেকের মতেই সেরা কোচদের একজন গুয়ার্দিওলা। তার অর্জনের ভাণ্ডারও সেই কথাই বলে। সেই তিনি এখন পার করছেন সবচেয়ে কঠিন সময়; কেননা, কোচিং ক্যারিয়ারে এর আগে যে কখনোই টানা পাঁচ হারের স্বাদ পাননি এই স্প্যানিয়ার্ড।
এই হারের পর লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় পড়ে গেছে সিটি। তাদের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্নে যেটা অনেক আঘাত।
বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে ২০১৬ সালে সিটির দায়িত্ব নেন গুয়ার্দিওলা। তখন থেকে কেবল সামনেই ছুটেছে দলটি; তার হাত ধরে আট বছরে ছয়বারই প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে তারা, এর মধ্যে টানা গত চারবার। সঙ্গে একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাসহ আরও অনেক ট্রফি জিতেছে তারা।
দলটির অবস্থান এতটাই উঁচুতে উঠে গেছে যে, তারা একটি ম্যাচ হারলেই কারণ খোঁজা শুরু হয়ে যায়। সেখানে টানা পাঁচ হারের ধাক্কা! গুয়ার্দিওলার কণ্ঠেও শোনা গেল এই অসহনীয় পরিস্থিতির কথা।
“(নিজের সময়ে) এই আট বছরে আমরা কখনও এরকম পরিস্থিতিতে ছিলাম না। আমি জানতাম, একটা সময় আমরা হোঁচট খাব। তবে, আমি কখনও ভাবিনি যে, প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে হারব। আগে আমরা অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিক ছিলাম, দিনের পর দিন, বারবার।”
“এখন আমরা বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারি না যে, (আমাদের) ফুটবলে কিছু (সমস্যা) হচ্ছে এবং এটাই জীবন।”
পথহারা সিটির অবস্থা কতটা খারাপ?
পরিংসখ্যানে চোখ রাখলেও ধারণা মেলে, কক্ষচ্যুত দলটির অবস্থা আসলে কতখানি খারাপ।
• কোচিং ক্যারিয়ারে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি গুয়ার্দিওলার। আর ২০০৬ সালে স্টুয়ার্ট পিয়ার্সের কোচিংয়ে সময়ের পর থেকে এটাই সিটির সবচেয়ে টানা বেশি পরাজয়ের ঘটনা।
• গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে এই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে হারল সিটি।
• কোচিং ক্যারিয়ারে কখনও লিগে ঘরের মাঠে চার গোলের ব্যবধানে হারের অভিজ্ঞতা হয়নি গুয়ার্দিওলার।
• গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে যৌথভাবে এটা সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। এর আগে সিটির হয়ে ২০১৭ সালে প্রিমিয়ার লিগে এভারটনের বিপক্ষে ৪-০ গোলে, ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-০ এবং বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেও ৪-০ গোলে হারের স্বাদ পেয়েছিলেন গুয়ার্দিওলা।
• ইতিহাদ স্টেডিয়ামে এত বড় ব্যবধানে আগে কখনও হারেনি সিটি।
• ইংলিশ ফুটবলের সবশেষ ৬৮ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ লিগের শিরোপাধারী প্রথম ক্লাব হিসেবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ হারল সিটি।
এর আগে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল চেলসির, ১৯৫৬ সালে। সেবার তারা ১৬তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছিল।
• ২০০৩ সালে আর্সেনালের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে হারের পর থেকে ঘরের মাঠে এটাই সিটির সবচেয়ে বাজে হার।
• কোচিং ক্যারিয়ারে গুয়ার্দিওলা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছেন টটেনহ্যামের বিপক্ষে, এই নিয়ে ৯ বার।
• এবার দিয়ে মাত্র তৃতীয়বার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাধারী দলের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে চার বা তার বেশি গোলে জিতল কোনো দল।
১২ ম্যাচে সাত জয় ও দুই ড্রয়ে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সিটি। তবে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় থাকা লিভারপুল একটি ম্যাচ কম খেলেছে। রোববার সাউথ্যাম্পটনের বিপক্ষে জিতলেই আর্না স্লটের দল এগিয়ে যায় ৮ পয়েন্টে। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.