বিশেষ প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানা এলাকায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠলে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) কালীগঞ্জের বালিগাঁও বড়নগর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: বন্যা আক্তার (৩১), আশিকুর রহমান (২৫), সংগীতা তেরেজা কস্তা (৩৩), মেরী গমেজ (৪০), সীমা আক্তার (৩৪) ও শামীমা আক্তার (৩২)। অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ও হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদ উত্তীর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রসুতির মৃত্যুর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২১ আগস্ট সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার তুমুলিয়া ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শিরিন বেগমের (৩২) প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে একই ইউনিয়নে বসবাসরত পূর্ব পরিচিত জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের মাধ্যমে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য তাঁকে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ওটিবয় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও আল্টাসনোগ্রাম করে সিজারের জন্য রোগীকে ওটিতে নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে চিকিৎসক মাসুদ গাইনোকলজিস্ট না হয়েও রোগীর সিজার করেন। ওটি শেষে ব্লিডিং হওয়ায় ডাক্তার মাসুদের পরামর্শক্রমে আশিক এবং বন্যা রোগীর পরিবারকে এবি পজেটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ভুক্তভোগীর ভাই ও ননদের ছেলের এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত হওয়ায় তাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে ভুক্তভোগীর ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আরও এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজনে ননদের ছেলের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহের উদ্দেশে তাকে হাসপাতালের বেডে শোয়ানো হয়। এরই মধ্যে হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা ভুক্তভোগীর শরীরে বি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘একপর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে আশিক ও বন্যা তড়িঘড়ি রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে নিয়ে তার পরিবার অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। পথিমধ্যে রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী অ্যাম্বুলেন্সে থাকাবস্থায় প্রাথমিক পরীক্ষায় রোগী মৃত বলে জানায়।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভুল চিকিৎসার অভিযোগে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের নির্দেশনায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ডাক্তার সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত ডাক্তার ছিল না। মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির অধিক বিভিন্ন অপারেশন সম্পন্ন করা হতো বলে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী প্রাপ্তি সাপেক্ষে অন কলে থাকা বিভিন্ন ডাক্তারদেরকে ডাকতেন। সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিস্টের ওটি চার্জ ছিল তিন হাজার টাকা এবং এনেস্থলজিস্টের দেড় হাজার টাকা সর্বমোট সাড়ে চার হাজার টাকা ডাক্তারদের প্রদান করত বলে জানা যায়। পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিনিক কর্তৃক রোগী ভেদে বিভিন্ন প্যাকেজে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ প্রতিনিধি রুহুল আমীন খন্দকার। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.