গাইবান্ধায় লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার ছড়াছড়ি। কয়লার বদলে পুড়ছে কাঠ : ইটবহনে ট্রাক্টর ট্রলি চলাচলে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা  জনদূর্ভোগ চরমে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:  গাইবান্ধায়  ইটভাটা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাটা মালিকেরা পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা যত্রতত্র গড়ে তুলছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা গুলোতে কয়লার বদলে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে । সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
এখনও অল্প উচ্চতার ড্রামসিটের এবং ইটের চিমনি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হয়ে পড়ছে এলাকার পরিবেশ। পলাশবাড়ী উপজেলা জুড়ে ৮ টি ইউনিয়নে আবাদি জমি নষ্ট করে বসতবাড়ী পাশে গড়ে উঠছে ও নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে।
জানা গেছে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার কথা।
কিন্তু গাইবান্ধার কোনো ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছে না। আর মানার চেষ্টাটুকু তাদের নেই। শুধুমাত্র নাম মাত্র কর ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের পকেটস্থ করার মধ্য দিয়ে চলছে এসব ইটভাটা এবং নতুন নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধায় গত ৩ বছরে ২৭টি ইটভাটা মালিককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৮টি ইটভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। বাকি ৯টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ওই ইটভাটা মালিকরা তা আর নবায়ন করেননি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত জেলায় ১০১টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই জেলা প্রশাসনের কাছে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য এখনো আবেদন করেননি। পলাশবাড়ী উপজেলা বর্তমান ইটভাটা ৪০ টি। লাইসেন্স প্রাপ্ত ২ টি।
উপজেলার এসব ইটভাটার কারণে ভাটার ইট পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর, ট্রলি চলাচলে রাস্তা ঘাট গুলোতে সর্বসাধারণের চলাচলে ব্যাপক জনদূর্ভোগ নতুন কিছু নয়। মান্দাত্তা আমলের আদলে আজো বন্দি এসব ইটভাটা এলাকার মানুষ, আবাদি জমি, বসতবাড়ী তথা জমি ও অন্যান্য জীব যা আছে এছাড়াও গোটা উপজেলার পরিবেশ।
এদিকে আয়কর বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিটিসি নিউজকে জানান, গত বছর তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৮৫টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটাও রয়েছে কয়েকটি। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
মাঝে মাঝে দেখানো মাত্র অভিযান পরিচালনা করে সাময়িক বন্ধ রাখা হলে কিছু দিন পরে আবারো এসব ইটভাটা কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। অপরদিকে নতুন করে গড়ে উঠা ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমান ও পানি ঢেলে নিভে দিলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ ইটভাটা গুলো বন্ধে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ড্রামসিটের চিমনির ইটভাটা একটি রয়েছে সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৩ একর ফসলি জমি নিয়ে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পলাশবাড়ি উপজেলা ইটভাটার তথ্য পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কেউ তা দেখছেন না। না দেখার কারণ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে বা জানা গিয়েছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা মালিক জানান,স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ১০ হাজার ও থানা পুলিশ কে ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন দিবসে ভাটা মালিকদের পক্ষ হতেও এভাবে টাকা দেওয়া হয়।
পলাশবাড়ী  উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির এক নেতা বিটিসি নিউজকে জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৪০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে তার ইটভাটাটিসহ মাত্র দুটির।কিভাবে লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা বছরের পর বছর এভাবে চলতে পারে তা তার জানা নেই। তবে প্রশাসন ইচ্ছা করলেই এসব ইটভাটা বন্ধ করে দিতে পারবে। তবে কেন কি কারণে করছে না তা তার জবাব তারাই জানে।
অপরদিকে জেলার বৈধ ইটভাটা মালিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিসি নিউজকে জানান, অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ ধরনের ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। আমরা সরকারের সকল নিয়ম মেনে ব্যয় করে ব্যবসা করছি আর এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে ভোক্তাধিকার আইন লংঙ্ঘণ করে নাম মাত্র ইট উৎপাদন করে ইটের বাজার মুল্য কমিয়ে দিয়েছে। একারণে বৈধ ভাটা মালিকগণের ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলো শুধুমাত্র কর প্রদান করে চলছে সরকারের কোষাগারে যে পরিমান কর প্রদান করা হচ্ছে এর ১৫ গুণ ক্ষতি করছে রাষ্ট্রের।
জেলার সকল ইটভাটায় ইটের কোন প্রকার উপদান ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধু মাত্র বালু, মাটি ও পানি দিয়ে তৈরীকৃত পুড়ানোর পরে হচ্ছে ইট। যা জনসাধারণের নিকট বিক্রি করা হচ্ছে উচিৎ মূল্যে। লক্ষ টাকা বেশী ব্যয়ে স্থাপনা নির্মাণে রড, সিমেন্ট অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হলেও ইট ক্রয় করে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে এসব ইটভাটার গ্রাহক সর্বসাধারণ।
জেলা জুড়ে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা এসব ইটভাটা বন্ধ করা সম্ভব না হলেও যাচাই বাছাই পূর্বক নিবন্ধিত করার মাধ্যমে নিয়ম ও আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃশাহরিয়ার কবির আকন্দ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.