গাইবান্ধায় মেম্বারের দূর্নীতির তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: “কানাকে হাইকোর্ট দেখানো” এই প্রবাদ বাক্যটির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। তিনি ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে আনীত বিধবা/বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাতের ঘটনা নিজে তদন্ত না করে দূর্নীতির দোসর একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
উক্ত চেয়ারম্যান বিধবা/বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাতকারী ইউপি মেম্বারের পক্ষ নিয়ে মিমাংসার নাটক সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে উল্লেখিত বিধবা/বয়স্ক ভাতার কার্ডটি সুকৌশলে নিজের কব্জায় নেয়ার তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান না করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকার সচেতনমহল।
অভিযোগে প্রকাশ, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম কর্তৃক অত্র ওয়ার্ডের বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে সরকারী বরাদ্দকৃত বিভিন্ন কার্ড করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় তালুকজামিরা গ্রামের মৃত খোকা ব্যাপারীর স্ত্রী তারামাই বেওয়ার নামে বয়স্ক/বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত করে দীর্ঘ ২ বছর থেকে ভূয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসছিল।
সুত্রে প্রকাশ, গত ১০/০৬/২০১৮ ইং উল্লেখিত দুস্থ মহিলা ‘তারামাই’ এর কাছ থেকে বয়স্ক ভাতা করে দেবে বলে আইডি কার্ড নিয়ে যায়। আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়া অবধি তারামাই বেওয়া উল্লেখিত মেম্বারের বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘোরাফেরা করা সত্ত্বেও তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতার কার্ডটি দেয়নি।
সম্প্রতি তারামাই বেওয়ার ছেলে তৈয়ব আলী লোক মারফত জানতে পারেন, তার মায়ের নামে একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড প্রস্তুত হয়েছে। পরে উক্ত মেম্বারকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করলে দূর্নীতিবাজ মেম্বার গত ২৮/০৪/২০২০ ইং তারিখে প্রতিবেশী মোখলেছুর রহমানের কাছে দুইটি পাতা ছেড়া অবস্থায় কার্ডটি তার মাকে দিতে বলে চলে যায়। যার কার্ড নং ৮০০৪, হিসাব নং ৭৯০/৭১২। এই বইতে জুলাই ২০১৮ হতে ভাতার টাকা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে।
যেহেতু জুলাই/১৮ হতে ভাতা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে সেহেতু উক্ত তৈয়ব আলীর মা তারামাই বেওয়া অদ্যাবধি কোন প্রকার টাকা পায়নি। বইটি নিয়ে ব্যাংকে গেলে জানা যায়,দূর্নীতিবাজ মেম্বার শফিকুল ইসলাম তার সবকটি কোঠার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে ।
এ ব্যাপারে তারামাই এর ছেলে তৈয়ব আলী গত ৩০ এপ্রিল/২০২০ ইং তারিখে পলাশবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিলের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু পলাশবাড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন নিজে তদন্ত না করে হরিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন কবির চৌধুরী রুশোকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
উল্লেখ্য, দূর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ ভূয়া স্বাক্ষরের মাধ্যমে যে কার্ডটির টাকা উল্লেখিত শফিকুল মেম্বার উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসছিল, একজন চেয়ারম্যান হয়ে তার ইউনিয়নেরই একজন মেম্বারের পক্ষে সাফাই গাইবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন চেয়ারম্যানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে “কানাকে হাইকোর্ট দেখানোর পূনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন।
সুত্রে প্রকাশ, উক্ত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে চেয়ারম্যানসহ ২জন সদস্য গত ১০ মে/ ২০২০ ইং তারিখে হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদে রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত শফিকুল মেম্বারকে অনুপস্থিত রেখে শুধুমাত্র বাদি পক্ষের উপস্থিতিতে তদন্ত কাজ শুরু করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন কবির চৌধুর রুশো ভুক্তভোগী তারামাই বেওয়াকে প্রথমেই বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে ব্যর্থ হলে সু-কৌশলে তারামাই বেওয়ার ছেলের কাছ থেকে ভাতা বইটি ছিনিয়ে নেয় এবং বলে আমার রিপোর্ট আমি যেভাবে পারি সেভাবে দিব,তোমরা এখন পরিষদের বাহিরে যাও বলে তাদেরকে একরকম তাড়িয়ে দিয়ে তিনি ইউপি চত্বর ত্যাগ করে চলে যান।
মজার ব্যাপার হলো এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে উপস্থিত বাংলাদেশ তৃণমূল সাংবাদিক কল্যাণ সোসাইটির গাইবান্ধা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক  সাংবাদিক শফিউল ইসলাম, সাংবাদিক রাব্বি মিয়াসহ বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী সাংবাদিক একত্রিত হয়ে অনুপস্থিত থাকা শফিকুল মেম্বারের মতামত জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ধুরন্ধর মেম্বার নিজেকে পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি এ বিষয়ে সব জানি, শফিকুল মেম্বার আমাদের লোক।
তোমরা এ বিষয়টি মিটিয়ে নাও। পরে সত্যতা প্রমানের জন্য  উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা  হলে তিনি জানান,এ সবের আমি কিছুই জানিনা!
পলাশবাড়ী উপজেলা  সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে কোন মতামত না দিয়ে তার প্রতিনিধি তদন্ত কমিটির সদস্য শ্রী শিবতোষ বাবুকে মতামত দেয়ার জন্য অনুমতি দেন। কিন্তু অনুমতি দেয়ার কথা শুনে শিবতোষ বাবুও রহস্যজনককারণে মতামত না দিয়ে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সটকে পড়েন।
অতঃপর এই তদন্ত অনুষ্ঠানের কমপক্ষে তিন সপ্তাহ গত হলেও কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তারামাই বেওয়া সহ এলাকার শান্তি প্রিয় সচেতন জনগণ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.