গাইবান্ধায় বিলীনের অপেক্ষায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৮০টি ঘর

 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের বাজে চিথুলিয়া ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া পূর্ব বাদামের চরে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প দুটির ২৮০টি ঘর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এসব আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের পর নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে আবারও আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তাই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের পরে নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা রাখার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আশ্রয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করতে ১৯৯৭ সাল থেকে এদেশে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ শুরু হয়। স্থানীয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে সেই জমিতে মাটি ভরাট করা হয় ও ঘর নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পরে আশ্রয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে দেয়া হয় স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলার মধ্যে সুন্দরগঞ্জে ১২টি, সদর উপজেলায় চারটি, ফুলছড়িতে একটি, সাঘাটায় আটটি, সাদুল্লাপুরে দুটি, পলাশবাড়ীতে একটি ও গোবিন্দগঞ্জে রয়েছে নয়টি আশ্রয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আশ্রয়ন প্রকল্প রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাজে চিথুলিয়ার চরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৪০টি ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। তখন নদী ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সুন্দরগঞ্জের ভাটি কাপাসিয়া পূর্ব বাদামের চরে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৪০টি ঘর নির্মিত হয় ৫ বছর আগে। তখন নদী ছিল প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে সেই নদী এসে এখন এই প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে ফেলছে।এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের ফলে মোল্লারচর ইউনিয়নের সিধাই চরের ১২০টি ঘর ২০১৭ সালের প্রথমের দিকে ও মাইজবাড়ীর চরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ১২০টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে একই বছরের শেষের দিকে। এতে করে পরিবারগুলো আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তারা আবার অন্য চরে গিয়ে বসবাস শুরু করেসরেজমিনে দেখা গেছে, বাজে চিথুলিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে ভেঙেছে ১০টি ঘর। এসব ঘর প্রস্তুতের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সবগুলো ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি গৃহহীনদের। ভাটি কাপাসিয়া চরের আশ্রয়ন প্রকল্পটির ইতোমধ্যে ৩৫টি ঘর ভেঙ্গে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে এই দুটি প্রকল্পের অন্যসব ঘরগুলোও।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মাইজবাড়ীর চরে গিয়ে দেখা গেছে, তখন নদী ভাঙনের কবলে পড়েছিল ১০টি ঘর। সেই আশ্রয়ন প্রকল্পটি পরের তিন-চার মাসের মধ্যেই পুরোটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না রাখায় কয়েক বছরের মধ্যে চরাঞ্চলের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়। এসব আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণের পরে নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে একদিকে যেমন আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো নদী ভাঙনের কবলে পড়বে না, অপরদিকে তেমনি টাকার অপচয়ও হবে না। প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্বার্থক হবে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

ভাঙনের বিষয়ে সুুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী বলেন, আমি এখানে সম্প্রতি যোগদান করেছি। ভাঙনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। ভাঙনরোধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়ার থাকে তাহলে আমি নেব।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.