গাইবান্ধায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে ড্রামচিমনিসহ শতাধি ইটভাটা, পোড়ানো হচ্ছে কাঠখড়ি

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ অল্প উচ্চতার ড্রামসীটের চিমনির ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে বেশি উচ্চতার ইটের চিমনি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের এ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গাইবান্ধায় অনেক ইটভাটার মালিক এ আদেশ মানছে না। এখনও অল্প উচ্চতার ড্রামসীটের এবং ইটের চিমনি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ফলে কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
গাইবান্ধায় প্রতিবছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব ভাটা স্থাপনে লাইসেন্স গ্রহণের কথা থাকলেও ইটভাটা মালিকেরা আমলে নিচ্ছে না । প্রশাসনের সামনে এভাবে ইটেরভাটা স্থাপন করা হলেও কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। গত দুই এক বছরের মধ্যে ২/১ টি অবৈধ ইটভাটায় জরিমানা করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণ দেখিয়ে নিচ্চুপ থেকেছে প্রশাসন। এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৭ সালে তিনটি অবৈধ ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ২০১৬ সালে কারো কোন জরিমানা করা হয়নি। তবে ২০১৫ সালে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছে জরিমানা আদায় করা হয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এধরণের ২/১ টি ঘটনা ঘটলেও আর বেশিকিছু করা হয়নি।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইটভাটা স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কি.মি. জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু গাইবান্ধার কোন ইটভাটা মালিকই এসব শর্ত মানছে না। আর যেসব ইটভাটা চালু রয়েছে তার অধিকাংশ মালিকই জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন লাইসেন্স গ্রহণ না করেই বছরের পর বছর ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানিয়েছে, এ জেলায় গত ৩ বছরে মাত্র ২৭টি ইটভাটা মালিককে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৮টি ইটভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। বাকি ৯টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও ওই ইটভাটা মালিকরা তা আর নবায়ন করেননি। প্রশাসনের একটি সুত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি এ পর্যন্ত জেলায় ১০১টি ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই জেলা প্রশাসনের কাছে লাইসেন্স গ্রহণের জন্য এখনও আবেদন করেননি। তবে বেসরকারি একটি সুত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে। এবারও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক ইটভাটার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলে ওই সুত্রটি দাবি করেছে। ওই সুত্রের মতে আরও ইটভাটা স্থাপনের কাজ চলছে।
এদিকে আয় কর বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর তিনি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৮৫টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ড্রামসীটের চিমনির ইটভাটাও রয়েছে কয়েকটি। তিনি বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনি একটি ড্রামসীটের চিমনির ইটভাটা রয়েছে সদর উপজেলার বল¬¬মঝাড় ইউনিয়নের সাহারবাজার সংলগ্ন কাঁশদহ গ্রামে। প্রায় ৩ একর ফসলী জমি নিয়ে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সাদুল্যাপুর এবং পলাশবাড়ি উপজেলাতেও ড্রামসীটের ইটভাটার তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এধরণের ঘটনা ঘটলেও কেউ তা দেখছে না।
পলাশবাড়ি উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এফ জে ব্রিকস্ এর মালিক মুকুল সরকার জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৪০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে লাইসেন্স রয়েছে তার ইটভাটাটিসহ মাত্র দুটির। তিনি বলেন, কিভাবে লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা বছরের পর বছর এভাবে চলতে পারে তা তার জানা নেই।
অপরদিকে জেলা ইটভাটা মালিকের সভাপতি আব্দুল লতিফ হক্কানী জানান, তিনি অবৈধ ইটভাটার মালিকদের সভাপতি নন। তিনিও বলেন, অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এ ধরণের ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে।#
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.