গাইবান্ধা প্রতিনিধি:গাইবান্ধা জেলার ৭ টি উপজেলায় চলছে শিশু শ্রম। জেলার বিভিন্ন শহর-বন্দর, ছোট-বড় হাট-বাজারে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ৭ টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,ইট ভাটা, ঝাঁলাই কারখানা, মটর মেকানিক্স কারখানা, বেকারী, ইষ্টিলের কারখানা, লেদ মেশিন, আটা মেশিন, চায়ের দোকান-হোটেল রেস্তোরাঁ, চিড়া মেশিনসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এসব শিশু শ্রমিক দিয়ে করানো হচ্ছে।
যে বয়সে শিশুদের বই, খাতা, কলম হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ের যাওয়ার কথা সেই বয়সে শিশুরা হাতে তুলে নিয়েছে চায়ের কাপ, ওয়ার্কশপ-এর হাতুড়ি, কাঁচামাল মাপের পালাসহ আরো নানান ধরনের কাজ। আবার কেউ কেউ হোটেল বয়, রাজমিস্ত্রির সহকর্মী ও ভ্যানের চালক। অনেকেই আবার মোটর গ্যারেজ, কলকারখানা, মুদি দোকান, ওয়েল্ডিং মেশিনের কাজও করছেন। কেউ কেউ ধানের কলের ধান মাড়াই, গৃহস্থালীর সকল কাজও করছেন।
আন্তর্জাতিক নীতিমালায় শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বন্যা, অনাবৃষ্টি, নদী ভাঙন, কৃষি উপকরণ ও দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, দারিদ্র ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শিশুরা তাদের শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। অপরদিকে যে সমস্ত শিশু আজ জীবিকার সন্ধানে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে হাড়ভাঙা শ্রম দিচ্ছে তার বেশির ভাগই নির্যাতিত নিপীড়িত।
সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোমরপুর চৌমাথা হাসবাড়ী রোড কল্যাণ স্টিল এন্ড অটবি লিগার ফার্নিচার মার্টে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১ শ জন শিশু শ্রমিক এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছর। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, তারা আশেপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আবার কেহ ৭ ম ৮ ম শ্রেনীতে পড়ালেখা করছে।
এ কারখানার ম্যানেজারকে শিশু শ্রমিকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শিশু শ্রম তো আইনত নিষিদ্ধ। এসব শিশুরা কারখানায় কাজ করতে আসলে আমরা কি করব।
শিশু শ্রমিকেরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সকাল ৮ টার সময় এসে কাজে জয়েন করি এবং রাত ৮ টার সময় ছুটি। প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাই ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ টাকা নিয়ে বাবা-মার হাতে তুলে দেই।
শিশু শ্রম সর্ম্পকে কয়েকজন সমাজ সচেতন নাগরিকের সাথে আলাপ করলে তারা সকলেই প্রায় একই কথা বলেছেন। শিশু শ্রমিকের বেতন তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এবং কাজে কোন ফাঁকি না থাকায় সকলেই এদের কাজে নিয়োগ করতে আগ্রহী। পেটের দায়ে শিশুরা ১২-১৬ ঘন্টা শ্রম দেয়। জীবন বাঁচার তাগিতে এসব শিশু শ্রমিক ১২/১৬ ঘন্টা শ্রম বিক্রি করে ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা নষ্ট করে ফেলছে। অল্প বয়সে পরিশ্রম করার ফলে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ধ বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এমনকি আবার অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে।
এব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাঈদের মোবাইলে মন্তব্য জানতে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.