গাইবান্ধায় আলোচিত এমপি লিটন হত্যা ।। অস্ত্র মামলায় কর্ণেল কাদের খানের যাবজ্জীবন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় আলোচিত সুন্দরগঞ্জ-১  আসনের সরকার দলীয় সাবেক এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলায় কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক  এই আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম শফিক বিটিসি নিউজকে বলেন, “পৃথক ধারায় একটিতে যাবজ্জীবন ও আরেকটিতে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে কাদের খানকে। এই মামলায় ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। রায় চলাকালীন আবদুল কাদের খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কাদের খান সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটী ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটী খানপাড়া গ্রামের মৃত নয়ান খানের ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ মাস্টারপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে কয়েকজন দুর্বৃত্তের হাতে গুলিবিদ্ধ হন তৎকালীন এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন ১ জানুয়ারি মনজুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লিটন হত্যাকাণ্ডের পর আবদুল কাদের খান তার ব্যবহৃত একটি পিস্তল সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা দেন। এই হত্যা মামলার তদন্তে জাতীয় পার্টি (জাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও একই আসনের সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

পরে ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া শহরের রহমান নগরের বাসা থেকে গাইবান্ধা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে গাইবান্ধায় নিয়ে আসে। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন আবদুল কাদের খান।

রিমান্ড চলাকালে কাদের খান জানান, পশ্চিম ছাপড়হাটী খানপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও গুলি মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা আছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ গিয়ে তল্লাশি করে একটি খালি ম্যাগজিনসহ পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ আরেকটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে জব্দ করে পুলিশ।

এই পিস্তল ও গুলির কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি আবদুল কাদের খান। পরে এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান এজাহার দায়ের করলে মামলা নং ৪১ হিসেবে রুজু করা হয়।

এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মুক্তারুল আলমকে।

তিনি ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণ, শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে গত ৩০ মে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেন বিচারক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.