গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পেঁপে চাষ করে লাখপতি আব্দুস ছামাদ 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার কালুগাড়ী গ্রামের মৃত আশেক মামুনের ছেলে আব্দুস ছামাদ পেঁপে চাষ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিনে তার পেঁপে বাগানে গিয়ে দেখাযায়, সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতি গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচা পেঁপে। থোকার মাঝে মাঝে দু’চারটি পাকা পেঁপেও ঝুলছে। দু’মাস ধরে গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করলেও গাছের পেঁপে যেন শেষেই হচ্ছে না।
পলাশবাড়ী পৌরসভার কালুগাড়ী গ্রামের মৃত আশেক মামুনের ছেলে আব্দুস ছামাদ পেঁপে চাষ করে লাখপতি হয়েছেন। তিনি, চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাছাই করা সোনালী জাতের বীজ সংগ্রহ করে প্রথমে একবিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেন। এরপর আস্তে আস্তে পেঁপে চাষ বৃদ্ধি করতে করতে চার বিঘা জমিতে এখন পেঁপে চাষ করছেন।
পেঁপে চাষী আব্দুস ছামাদ বিটিসি নিউজকে বলেন, অন‍্যান‍্য ফসলের তুলনায় পেঁপে চাষ করে লাভবান হই। এর পর আরো একবিঘা জমিতে পেঁপে চাষ বৃদ্ধি করি।
৬০ শতাংশ জমি থেকে খরচ বাদ দিয়ে ৪ লাখ টাকা আয় করি। মোটে আমার চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। এক লাখ টাকা খরচ পড়েছে। আমার এ পেঁপে জমিতে কাঁচা ৪শ টাকা মন আর পাকা  এক হাজার টাকা মন বিক্রি করা যায়।  এছাড়াও গাইবান্ধা শহর, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীর বিভিন্ন বাজারে পাকা পেঁপে বিক্রি করি। আমার বাগানের একটি পেঁপে সাড়ে ৫ কেজি পযর্ন্ত হয়। একটি গাছ থেকে দুই আড়াই মন ফল পাওয়া যায়। এভাবে দুইবছর চলতে থাকে। ৬ থেকে ৭ মাস ফল রাখা হয়। এরপর পরবর্তীতে কাঁচা -পাকা উভয়ই বাজারে বিক্রি করা হয়। ফল ব‍্যবসায়ীরা জমিতে এসে ১৪শ টাকা পাঁকা ও কাচা ৪শ টাকা মন দরে কিনে নিয়ে যায়।
এ চাষী অন‍্যান‍্য কৃষকদের উদ্দেশ্যেয় বলেন, আমি কৃষকদের বলব আপনারা আমার বাগানে এসে চারা নিয়ে গিয়ে চাষাবাদ করুন, লাভবান হবেন।
জমিতে পেঁপে কিনতে আসা পলাশবাড়ীর ব‍্যবসায়ী মোঃ আউয়াল হোসেন বলেন,আমরা বাগান থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মন পাকা পেঁপে ক্রয় করে নিয়ে যাই। অন‍্যান‍্য জায়গার তুলনায় এখানকার পেঁপের মান ভালো হওয়ায় আব্দুস ছামাদ চাচার বাগান থেকে পেঁপে ক্রয় করে নিয়ে যাই। প্রতি মন ১১শ ১২ শ টাকায় কিনি।
স্থানীয় হোসেনপুর ইউনিয়নের দিগদারী গ্রামের ব‍্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ১১ শ টাকা মন দরে পেঁপে কিনে নিয়ে গিয়ে ঢাকায় বিক্রি করি। একদিন পরপর ২৫ মন করে পেঁপে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা, মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, পেঁপে শরীরকে সুস্থ রাখতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করার পাশাপাশি,এটি জ্বর নিরাময়ে,পেটের সমস্যা দূর করে,গ‍্যাষ্টিক এবং বদহজমের অনেক উপকারি,কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে এনজাইম রয়েছে যা হজমশক্তিতে সাহায্য করে।
এছাড়াও হাঁপানি, অষ্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগের উপকার হয় এবং  হার্ট ভালো রাখে। এর রয়েছে প্রচুর ঔষধি গুন অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনী রোগ ও পাকস্থলীর ক‍্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে পেঁপে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু বিটিসি নিউজকে জানান, পেঁপে খুব সুস্বাদু একটি জনপ্রিয় ফল। পেঁপে উঁচু ও মাঝারি জমিতে চাষ করা যায়। পেঁপে চাষে অল্প পুঁজি খাটিয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বতর্মানে অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পেঁপে দ্রুত পচনশীল না হওয়ায় ব‍্যবসায়ীরা এটি অনেকদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। বাজারে প্রচুর পেঁপের চাহিদা রয়েছে। এ নিয়ে কৃষকদের উদ্ধুদ্বসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বিটিসি নিউজকে জানান, আমরা কৃষকদের পেঁপে চাষে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রণোদনাসহ সার বীজ দিয়ে সহযোগিতা অব‍্যাহত রেখেছি। আব্দুস ছামাদ পেঁপে চাষ করে লাখপতি হয়েছেন শুনে ভালো লাগছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.