গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ডিজেলের দাম বাড়ায় হতাশায় কৃষকেরা 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন কৃষকেরা। তাদের দাবী এতে করে উৎপাদন খরচেই উঠবে না। ফলে ধানচাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। চারিদিকে ধানের জমিগুলোতে চলছে ভূট্টার চাষ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সৃত্রে জানাযায়, বতর্মান অর্থ বছরে উপজেলায় ১২ হাজার ৮ ‘শ ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় ডিজেল চালিত সেচ পাম্প রয়েছে ৪শ ৩৫ টি, বিদ‍্যুৎ চালিত সেচ পাম্প রয়েছে (মটর) ৩শ ৪০ টি,আর কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে সৌরপ্লান্টের মাধ্যমে অর্থাৎ সোলার প‍্যানেলের মাধ্যমে সেচ পাম্প রয়েছে একটি। ডিপ মেশিন কতটি রয়েছে এর তথ‍্য কৃষি অফিসে নেই।
এব‍্যাপারে উপজেলা বিএডিসি’র উপসহকারী কর্মকর্তা সামিউল পারভেজ বিটিসি নিউজকে জানান, বিএমডিএ থেকে ৭২টি ও বিএডিসি ৬টি মোটে ৭৮টি ডিপ মেশিন রয়েছে। এছাড়াও সোলার প্ল‍্যান্টের মাধ্যমে রাঙ্গামাটিতে একটি, হোসেনপুর ইউনিয়নের চেরেঙায় একটি, পৌরসভার বাসকাটা ব‍্র‍্যাকের নার্সারিতে একটি রয়েছে।
কৃষকেরা জানান, জমিতে ইঞ্জিনচালিত সেচ পাম্প দিয়ে পানি দেন। এতে অনেক টাকা খরচ হয় তাদের। তার ওপর এবার ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
কৃষকেরা আরো বলেন, ‘প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ডিজেল প্রয়োজন হয় জমি সেচ দিতে। গত মৌসুমে যা খরচ হয়েছে এবছর তার চেয়ে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এবছর ধানের  দাম না বাড়লে লোকসান গুনতে হবে। আর লোকসান দিয়ে চাষাবাদ করব কীভাবে? এপ্রশ্ন এখন সকল কৃষকদের।
কৃষকরা বলছেন, বীজতলা প্রস্তুত,ধানমাড়াই করতেও ডিজেল চালিত ট্রাক্ট্রর বা ইঞ্জিন চালিত মেশিন ব্যবহার করতে হয়। ডিজেলের দাম বাড়ানোয় ট্রাক্ট্ররের খরচ বেড়ে যাবে। বাড়তি এই খরচ এখনই বহন করতে হবে কৃষকদের।
কৃষকনেতারা বিটিসি নিউজকে বলেন, এমনিতেই কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম পায় না। বছর বছর লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন তৈল, ডিজেলের দাম বাড়ায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ এসে পড়ল কৃষকদের ওপর। তারা আরো বলেন, ধান উৎপাদনে কৃষকদের দু’বছর আগেও অনীহা ছিল। গেল দুই বছরে সেটি কিছু কেটেছিল। ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে কৃষকদের মানসিক অবস্থা আবার দুই বছর আগের অবস্থায় চলে যেতে পারে। তাদের মতে উপজেলায় এখন পাওয়ার ট্রিলার, ধান মাড়াইয়ের মেশিন, শ্যালো মেশিন, পাওয়ার পাম্প সবই ডিজেল চালিত হয়। গ্রামের কাছাকাছি জমি হলে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। কোথাও কোথায়ও ডিজেল ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। আগে অনেক জমিতে প্রাকৃতিক সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হতো। পলিতে বেশিরভাগ এলাকা ভরাট হওয়ায় এখন যান্ত্রিক সেচযন্ত্র ছাড়া উপায় নেই। আগে গরু দিয়ে চাষাবাদ হতো, এখন পাওয়ার ট্রিলারই ভরসা। আগে ধান মাড়াই হতো গরু দিয়ে। এখন মাড়াই হয় মেশিনে। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ যে পরিমাণ বাড়বে, সেই অনুপাতে ফসলের দাম পাবে না কৃষক।
এব‍্যাপারে মন্তব্য জানতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুনাহার সাথীকে অফিসে না পেয়ে তার ব‍্যবহৃত মোবাইলে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা বিএডিসি’র উপ-সহকারী কর্মকর্তা সামিউল পারভেজ এব‍্যাপারে মন্তব্য দিতে রাজী নন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বিটিসি নিউজকে জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে না। চাষাবাদের খরচ বাড়লে ধানের দামও বাড়তে পারে। এখানে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কৃষকদের ক্ষতিপুঁষিয়ে দিতে আমরা সরকারি ভাবে কৃষকদের বিনামুল্যেয় বীজ ও সার প্রদান করছি। প্রণোদনা দিচ্ছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.