গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মানুষের জীবন- জীবিকা আর বিচিত্র নয়। এখানকার বালাসী নৌবন্দর পর্যটন কেন্দ্রের অপারসম্ভাবনা রয়েছে। এ নৌবন্দর ঘিরে হতে পারে মিনি কক্সবাজার। কর্মসংস্থান হবে অনেক বেকার যুবকের।
জানাযায়, ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় তিস্তামুখ ঘাট ও জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনা নদীতে রেল ফেরির সার্ভিস চালু করা হয়।
১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। এখানে গড়ে তোলা হয় বিশাল নৌবন্দর।
বালাসী নৌবন্দরের মনোরম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন অনেক তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী বিনোদনপ্রেমী মানুষ। অনেকে সপরিবারে বেড়াতে এসে সারাদিন থেকে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরছেন। সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন আনন্দময় স্মৃতি। গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দূরে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের কুলঘেষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ নৌবন্দর আস্তে আস্তে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
বালাসীঘাট নৌবন্দর এলাকা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিকেলে এখানে অনেকেই দল বেঁধে বন্ধুবান্ধব ও পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন।
ঈদ, পূজা, নববর্ষ ও ভেলেন্টাইন ডে সহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে এলাকাটি ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠে।
ব্রক্ষ্মপুত্র নদের উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস আর বাহারি নৈসর্গিক প্রকৃতি আগতদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়। পর্যটকেরা এখানে এসে নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো, নদীতে নৌকাভ্রমণ, চরের মাঝে ফসলের জমিতে হেঁটে চলা, জেলেদের মাছ ধরা, ফসল মাথায় করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, কাঁশফুল আর নদীর দু’ ধারের মনোরম দৃশ্য আকৃষ্ট করছে।
এছাড়াও নদীর বুকে জেগে ওঠা ৪৮ বছরের পুরানো ১৭০ চরে জীবন-জীবিকা এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। চরগুলোতে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, দোকান -পাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গুচ্ছগ্রাম গড়ে উঠে চরাঞ্চলের জীবনই পাল্টে দিয়েছে।
বাজে ফুলছড়ি ও পূর্ব খাটিয়ামারী চরে গেলে দেখা যাবে মহিষের পাল। দক্ষিণ খাটিয়ামারী, কড়াইবাড়ী ও পূর্ব গাবগাছীসহ বিভিন্ন পুরানো চরে দেখতে পাওয়া যাবে ঘোড়া। বাজে ফুলছড়ির চরে রয়েছে অনেক পরানো ঘন গাছপালার এক মনোরম দৃশ্য। ছাগল আর ভেড়ার পাল চরাঞ্চলের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এরা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিতে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা।
বতর্মানে চরাঞ্চলের জীবন-জীবিকা বিচিত্র নয়। এখানে ক্ষেপ নৌকা চলে শত শত। আর স্যালো ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা চলে ১৩০ থেকে ১৬০ টি। এসব নৌকা দেওয়ানগঞ্জ, রাজীবপুর, নয়ারচর, মোল্লারচর, পাকুরের চর, আনন্দবাড়ী, সামুন্দাবাড়ী, কামারজানী, খাটিয়ামারী, ফুলছড়ি, রাজীবপুর চলাচল করে।
নৌকার মালিকেরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যে উর্পাজন হয় এর মাঝে ঘাট ভাড়া দেড়শ টাকা, নৌকা পাহারাদারকে দিয়ে দুটি মানুষের সংসার মোটামুটি বেশ ভালোই চলে।
কুন্দেরপাড়া, বাজে তেলকুপি ও কালুরপাড়া চরাঞ্চলের মানুষেরা জানান এসব চরেসহ বেশকিছু চরে আর পানি ওঠে না। চরগুলোতে যদি পযাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ফুল ও ফলের বাগান থাকত, ছায়া এবং শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগানো যেত, বিশ্রাম ও বসার ব্যবস্থা থাকত, নারিকেল -সুপারি আর তালগাছের বাগান করা যেত তবে পর্যটন আরও আকৃষ্ট করত।
স্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট ও নিয়মিত পুলিশের টহল নিশ্চিত থাকত, শিশুদের জন্য চর গুলোতে বিভিন্ন প্রকার খেলনা সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকলে পর্যটনে ভরপুর থাকত বালাসী নৌবন্দরটিসহ চরগুলো। পাশাপাশি অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হত এখান থেকে।
পর্যটকেরা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বালাসী নৌবন্দরকে ঘিরে যে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে তা প্রশাসনকে ধরে রাখতে হবে। এখানে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নদীর ধার দিয়ে বসার জায়গা করে দিতে হবে। নদীর ধারদিয়ে ছায়া ও শোভা বর্ধনকারী গাছ লাগাতে হবে। চরগুলোতে ফুল, ফলের গাছ, নারিকেল, সুপারি ও তাল গাছ লাগাতে হবে। চরের মাঝে নৌপুলিশের নিয়মিত টহল জোরদার করতে হবে। তবেই মিনি কক্সবাজারে রুপনিতে পারে এ নৌবন্দর।
বালাসী নদের উপর বেধে রাখা বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেরীর ওপরে দাঁড়িয়ে নদীর বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ পান অনেকেই।
শুধু জেলা শহর থেকেই নয়, আশপাশের জেলাগুলো থেকেও অনেকে এখানে বেড়াতে আসেন। অটোরিক্সা, রিক্সা ও সি.এন.জি.যোগে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.