গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় খুলনাবাসী স্মরণ করল শহীদ হাদিসকে

 

শহীদ হাদিস স্মৃতি সংসদ : খুলনাবাসীর শত আন্দোলন সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ আর বিনোদনের প্রধান ঠিকানা “শহীদ হাদিস পার্ক” যার নামে সেই শেখ হাদিুসুর রহমানের ৭৫তম জন্মদিন ছিল গত ২১শে এপ্রিল শনিবার। দিনটি বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে শহীদ হাদিস স্মৃতি সংসদ, বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটি ও বীরশ্রেষ্ঠ মোঃ রুহুল আমিন পাবলিক লাইব্রেরি।

দিনের কর্মসূচী শুরু হয় সকাল আটটায় গোয়ালখালি গোরস্থানে শহীদ হাদিসের সমাধিক্ষেত্রে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে । দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন প্রভাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মোঃ মুনসুর আহম্মদ। এ সময় সমাধিক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব উপভূমি সংস্কার কমিশনার এস এম রইস উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশ কর্মচারি কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক মুহাঃ বিল্লাল হোসেন খান, বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটির পরিচালক এ,এইচ,এম জামাল উদ্দীন, আহছানউল্লাহ কলেজের অধ্যাপক মোঃ মমতাজ আলী, বিডিএস চাইল্ড পার্লামেন্টে এর সদস্যবৃন্দ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সকাল ন’টায় বীরশ্রেষ্ঠ মোঃ রুহুল আমিন পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে শহীদ হাদিসুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি প্রতিনিধি দল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শহীদ হাদিসের ভ্রাতুষ্পুত্র ইঞ্জি. মোঃ জাহিদুর রহমান প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নিকট ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হাদিসের পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

সকাল এগারটায় খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান হাজী মহসীন রোডের যে স্থানে শেখ হাদিসুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন সে স্থানে ফলক স্থাপন করেন। এ সময় নগরীর সর্বস্তরের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার এস এম রইস উদ্দিন আহম্মদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবীর। প্রধান অতিথি আলহাজ্ব মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, শহীদ হাদিস যে মিছিলে অংশ গ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হন সে মিছিলে আমিও ছিলাম। যারা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আত্মদান করেছেন তাদের স্মরণ করতে হবে। তিনি খুলনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে খুলনা হেরিটেজ মিউজিয়াম ও শহীদ হাদিস স্মৃতি সংসদকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি শহীদ হাদিসের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি শহীদ হাদিস পার্কে স্থাপনের অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটির উদ্যোগে বিকাল চারটায় শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয় শিশু সমাবেশ। সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মেজর (অবঃ) ইঞ্জি. বি এম আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিচালনা করেন অধ্যাপক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক মোঃ মমতাজ আলী। নগরীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদ হাদিস এর উপর আবৃত্তি, বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। বিকাল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হয় শহীদ হাদিসের উপর আলোচনা সভা। শহীদ হাদিস স্মৃতি সংসদের সভাপতি সাবেক গণপরিষদ সদস্য এ্যাড. মোঃ এনায়েত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ খুলনার চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম. বাবর আলী ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ঐতিহাসিক হাদিস পার্কের এক সময় নাম ছিল গান্ধী পার্ক পরবর্তীতে জিন্নাহ পার্ক। এ নামের পরিবর্তে শহীদ হাদিসের নামে এ পার্কের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ পার্কের জন্য এ নামই সঠিক এবং যথার্থ। তিনি শহীদ হাদিসকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং শহীদ হাদিস স্মৃতি সংসদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

শহীদ হাদিসের জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে খুলনা হেরিটেজ মিউজিয়াম ২০১৫ সালে প্রবর্তন করে ‘হিরো অব দ্য সুন্দরবন’ পদক। পদক মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মিন্টু ২০১৭ সালের পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন এবং প্রধান অতিথি শেখ হারুনুর রশিদ পদক প্রাপ্তদের মেডেল পরিয়ে দেন। ২০১৭ সালের পদক বিজয়ীরা হলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার সাবেক নির্বাহি অফিসার মোঃ বিল্লাল হোসেন খান (বাল্য বিবাহ, ধূমপান ও মাদকমুক্ত করণ আন্দোলনে আপোষহীন ভূমিকার জন্য), অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির (নির্ভুল মুক্তিযোদ্ধা বাছাই প্রক্রিয়ায় নির্ভীক ও মুক্তিযুদ্ধের বই পড়া আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য), অধ্যাপক মিনু মমতাজ (প্রকাশক, সাহিত্য সংগঠক ও একুশের বই মেলা আয়োজনে বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য) এবং মেহেদী হাসান মিরাজ (ক্রিকেট অঙ্গনে গৌরবময় ভূমিকা রাখার জন্য)। সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় পদক বিজয়ীদের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে খুলনার কৃতি শিশু শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.