খুলনাব্যুরো: সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের দুটি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে সাড়ে ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকায় দেড় একর এবং ধানসাগর টহল ফাঁড়ির তেইশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় ৪ দশমিক শূন্য ৫ একর বনভূমি দগ্ধ হয়েছে।
এদিকে গত ২৩ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ২৬ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারই বন বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, অধিকাংশ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতায়।
বুধবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, “বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জোয়ারের সময় পানি ছিটানো হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবারও (২৮ মার্চ) পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর ‘ফায়ার আউট’ ঘোষণা করা হবে।”
দুইস্থানেঅগ্নিকাণ্ড, ৪৮ঘণ্টারবেশিসময়ধরেপুড়েছেবন
গত শনিবার (২৩ মার্চ) সুন্দরবনের কলমতেজী বন টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকায় প্রথম আগুন লাগে। বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে রোববার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। কিন্তু সুপ্ত আগুনের সন্ধানে ড্রোন ব্যবহার করে বন বিভাগ আরও একটি স্থানে আগুনের অস্তিত্ব শনাক্ত করে।
প্রায় কয়েক কিলোমিটার দূরে ধানসাগর টহল ফাঁড়ির তেইশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় আবারও আগুন দেখা যায়। সেখানে আগুন ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জ্বলতে থাকে।
অবশেষে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলের দিকে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের টানা প্রচেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
তদন্তকমিটিগঠন, ক্ষয়ক্ষতিরহিসাবচলছে
বন বিভাগের পক্ষ থেকে দুটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, জিপিএসের মাধ্যমে পরিমাপ করে আপাতত সাড়ে ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ জানা যাবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সুন্দরবনে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক। তবে এবারের আগুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়েছে নাকি প্রাকৃতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে। সুন্দরবনে আগেও বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় মৌয়াল, কাঠুরে কিংবা মাছ শিকারিরা অনেক সময় অসাবধানতাবশত আগুন লাগিয়ে ফেলতে পারেন। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা বনভূমি দখল বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিতে পারে বলেও সন্দেহ করা হয়।
সুন্দরবনের পরিবেশ সংরক্ষণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারির আহ্বান জানানো হয়েছে।পাশাপাশি আগুন লাগার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে স্থানীয় জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ২৬ বার অগ্নিকাণ্ড
গত ২৩ বছরে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ২৬ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবারই বন বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, অধিকাংশ আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতায়। তবে বনজীবীরা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকায় আগুন জ্বলছে। এর আগে ২০২৪ সালের ৪ মে একই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনের লতিফের এলাকায় আগুন লেগেছিল। বন বিভাগ ২০০২ সাল থেকে ঘটে যাওয়া ২৫টি অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করেছে। এসব ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগুনের কারণে বন বিভাগের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৩ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেলে-মৌয়ালদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন কিংবা মৌমাছি তাড়াতে জ্বালানো মশালের কারণে আগুন লেগেছে। তবে বনজীবীরা এ দাবির বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে, যা তদন্তে সঠিকভাবে উঠে আসেনি।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে আগুন লাগার জন্য জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতা, ধূমপান কিংবা মৌমাছি তাড়াতে মশাল জ্বালানো। বন দখল বা বিশেষ উদ্দেশ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিতে পারে। এছাড়া প্রচণ্ড গরম ও শুকনো মৌসুমে কোনোভাবে আগুন লেগে যেতে পারে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.