গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে : এম আবদুল্লাহ


প্রেস বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। নির্বাচন প্রথার দাফন কাফন সম্পন্ন করেছে। অপশাসন কায়েম করায় সারা বিশ্ব এই সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে। দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের মাধ্যমে জনগনের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনতে পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে গণমাধ্যমকে সাহসী ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারী) খুলনায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন বিএফইউজের সভাপতি এসব কথা বলেন। সকালে নগরীর হোটেল এ্যাম্বাসেডরের সেমিনার রুমে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা (এমইউজে)’র উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এমইউজে সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ১৪ বছর দেশের পেশাজীবীদের মধ্যে সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি অত্যাচার নির্যাতন, গুম-খুন ও মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছে। কে ক্ষমতায় যাবে বা কাকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে তা নির্ধারণ করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব নয়। কিন্ত দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, ভোটাধিকার না থাকে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে- সে সময় কলম ধারণ করা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব।
সাংবাদিকরা আজ সত্য প্রকাশ করতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র ১৪ বছরে ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যার এক যুগ পেরিয়েছে। আজও চার্জশিট দাখিল হয়নি। এমইউজের সাবেক সভাপতি শেখ বেলালউদ্দিন হত্যার ১৮ বছর পার হয়েছে। ন্যায়বিচার হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যম আইনসহ নানা কালাকানুন জারি করে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমগুলো আজ কর্পোরেট মালিকদের হাতে বন্দী বলে অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদপত্রের সংকট নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রী সাথে দেনদরবার করেন। কিন্ত সাংবাদিকের সত্য প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। মালিকরা সরকারের কাছে আত্মা বিক্রি করেছেন। জনগনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কখনো সত্যিকারের গণমাধ্যম হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগ এবং গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার, মুক্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনো একসাথে যায়না দাবি করে তিনি বলেন, তারা ক্ষমতা পেলেই গণতন্ত্রের গলাটিপে ধরে, ভোটাধিকারকে হত্যা করে। তিনি বলেন, ১৩ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ৩৩ হাজার কোটি টাকায় পৌছালো। মেট্রো রেল নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ হলো। মাত্র দুই স্টেশনে চলাচলরত মেট্রো রেল আজ যাত্রী শুণ্য। উন্নয়ন সাংবাদিকতায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া কলমে এসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কোন নিউজ প্রকাশ পায়না। কেউ এ নিয়ে কথা বললে তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত করা হয়।
আজ রাষ্ট্র, সরকার, দল- সবকিছুকে একাকার করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা হতে পারেনা।
২০০৮ সালে দিল্লির নিয়ন্ত্রণে মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিনের প্রযোজনায় পরিচালিত পাতানো নির্বাচনে দেশ থেকে গণতন্ত্রকে বিদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এম আবদুল্লাহ। আর নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এটিএম শামসুল হুদা ও পরবর্তীতে রকিব কমিশন নির্বাচনকে ব্যবস্থাকে হত্যা করে কফিনে ভরে দাফন সম্পন্ন করেছে। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছে সবাইকে চরম পরিণতির শিকার হতে হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি সহ অসংখ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং শত শত অনলাইন মিডিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
আলোচনা সভার প্রধান বক্তা বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, সরকার গণতন্ত্রকে কফিনে ভরে ফেলেছে। এখন তাকে সমাধিস্থ করার চেষ্টা চলছে। গণতন্ত্রকে কফিন মুক্ত করতে হলে গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ অসংখ্য কালাকানুন জারি করেছে। সৎ সাংবাদিকতার পরিবর্তে দেশে এখন শাসক দলের লেজুরবৃত্তি চলছে। পেশায় টিকে থাকতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন সেলফ সেন্সরশিপ করতে। এরপরও সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, হামলা, মিথ্যা মামলায় হয়রানি চলছে। আর একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে নিতে সরকার নতুন করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে নিতে নানামুখি তৎপরতা শুরু করেছে। স্বৈরাচারি সরকার জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার এক দফার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোঃ জাকির হোসেন ও বর্তমান সহ সভাপতি মোঃ রাশিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন।
কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ গাজী আব্দুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী আব্দুল বারী, জামায়াতে ইসলামির মহানগর নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, মুসলিম লীগের মহানগর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু। এমইউজের সদস্য মোঃ এরশাদ আলী ও কবি হেফজুর রহমান।
এমইউজের সহ সভাপতি এহতেশামুল হক শাওনের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ আব্দুল্লাহ বিন আজাদ।
আলোচনা সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আঞ্চলিক সংবাদ ক্যাটাগরিতে একাধিকবার সম্মাননা পদক লাভ করায় এমইউজের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান হিমালয়, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এইচ এম আলাউদ্দিন এবং এমইউজের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নুরুজ্জামানকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল খালেক আজীজী, কে এম জিয়াউস সাদাত, হারুন অর রশিদ, শামসুল আলম খোকন, আহমদ মুসা রঞ্জু, মাজহারুল ইসলাম।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আশরাফুল আলম খান নান্নু, শেখ সাদী, জামায়াতে ইসলামির মহানগর সহকারি সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম বাবু, মহিলা দল নগর সভাপতি আজিজা খানম এলিজা, জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট তছলিমা খাতুন ছন্দা, নজরুল গবেষক সৈয়দ আলী হাকিম, বিএল কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী জলিল, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের বন্ধন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সহ সভাপতি মোঃ আতিয়ার রহমান, জিয়া পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, অধ্যাপক মোস্তফা মাহমুদ মুকুল প্রমুখ।
শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলালউদ্দিনের ১৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা আগামীকাল ১১ ফেব্রুয়ারী মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সাবেক সভাপতি শেখ বেলাল উদ্দিনের ১৮ তম শাহাদাতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শুক্রবার এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এমইউজে সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক নয়াদিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার ও শহীদ সাংবাদিক বেলাল উদ্দিনের ছোট ভাই শেখ শামুসদ্দিন দোহা।
বক্তারা সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শহীদ সাংবাদিক বেলালউদ্দিনের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। ১৮ বছরেও তার হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পরে দোয়া মোনাজাত করেন এমইউজের নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ নুরুজ্জামান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.