খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ শেষ, গননা শুরু

খুলনা ব্যুরো: বিএনপির ভোট বর্জনে খুলনায় সমতাহীন নির্বাচনের ভোট গ্রহন শেষ হয়েছে। দুই মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ আর বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ বিরতিহীন ভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি কেন্দ্রে এক হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষে একযোগে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। নির্বাচন ঘিরে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা নগর।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়াম থেকে।
গাজীপুরের পর খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ধীর গতি হওয়ায় অনেক ভোটার ভোট দিতে এসে উৎসাহ হারিয়েছেন।
ইভিএমে ভোট নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল।
হাতপাখার এই প্রার্থী অভিযোগ করেন, ‘ইভিএম মেশিন অনেক পুরোনো। ইভিএমে হাতপাখায় ভোট দিলে তা নৌকায় চলে যাচ্ছে।’
আব্দুল আউয়ালের সহকারী মো. নাসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুলনা সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর কেন্দ্র স্যাটেলাইট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমাদের একজন ভোটার হাতপাখায় চাপ দিলেও ভোট নৌকায় চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমরা ওই কেন্দ্রে গেছি প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রিসাইডিং অফিসার আনোয়ারুল কবির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে আমরা একটা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কেসিসি) নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টের সংকট রয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট থাকলেও অন্য মেয়র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট নেই বললেই চলে।
তবে সাধারণত নির্বাচনগুলোতে পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ শোনা গেলেও খুলনাতে নৌকা ছাড়া অন্য প্রার্থীরাই আছেন পোলিং এজেন্ট সংকটে।
সকাল থেকে নগরীর ভেতরে ও বাইরে প্রায় ১৫টি কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে শুধুমাত্র নৌকা ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট আছে। আবার কোনো কেন্দ্রে লাঙল ও হাতপাখার পোলিং এজেন্ট থাকলেও শুধুমাত্র একজনকেই পুরো কেন্দ্রে পাওয়া গিয়েছ।
সকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, তার সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট আছে কিন্তু সব বুথে নেই। তবে তার পোলিং এজেন্টের সংখ্যা তিনি জানাতে চাননি।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, তারা ৯০ শতাংশ কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন। ১০ শতাংশে দিতে পারেননি।
তিনি জানান, কেন্দ্রে দিলেও সবগুলা বুথে পোলিং এজেন্ট নেই তাদের। এর কারণ হিসেবে বলেন, তার দল ৩২ বছর ক্ষমতায় নেই তাই অনেকেই পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে চাচ্ছে না। এইজন্য তারা পোলিং এজেন্ট সংকটে পড়েছেন।
কেসিসি নির্বাচনে কেন্দ্র ২৮৯টি আর পোলিং বুথ ১ হাজার ৭৩২টি। জাতীয় পার্টির সূত্র বলছে, তাদের পোলিং এজেন্ট ২০০ এর মত। এমন তথ্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি তার কাছে ২০০ পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে এমন জানিয়েছেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) জাদুর বাক্স বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু।
তিনি বলেন, ভোটের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অথচ নৌকার প্রার্থী হলে তাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। আমি এখনও বলি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সন্দেহ।তবে তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (১২ জুন) সকাল পৌনে ১১ টার দিকে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের খুলনা কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও বলেছি ‘ইভিএম হচ্ছে একটি জাদুর বাক্স’। আমি কয়েকটা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়েছে। পল্লীমঙ্গল ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাটিতে মেশিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেছে মেশিনে ডিস্টার্ব দিয়েছে। দুই ঘণ্টা হয়ে গেলেও ভোট কাস্ট হয়েছে ৩০টি। ২ ঘণ্টায় যদি ৩০টি ভোট হয় তাহলে ভোটের সংখ্যা কমে। আমার সন্দেহ হচ্ছে এখানে কোনো কারচুপি আছে কি না।
খুলনা-২ আসনের ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে। কিন্তু খুলনা-৩ আসনের ভোটারদের মোটেও ধারণা নেই। তারা বলেছে একটা ভোট দিতে গেলে ২০/২৫ মিনিট সময় লেগে যায়। আমি নির্বাচন কমিশনকে আগেই বলেছি আপনাদের এই ‘জাদুর বাক্স’ এইবার মাফ করেন, শুনলো না। বেশিরভাগই একঘণ্টা ইভিএম চালাতে পারে নাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে সেন্ট জোসেফ স্কুল কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগ পেয়ে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব। এ সময় তিনি ওই প্রিজাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের হেয় করবেন না। আমাদের আন্তরিকতার বা স্বচ্ছতার কোনো অভাব নেই।’
আজ সোমবার (১২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে মোবাইল ফোনে তিনি কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার ওই প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে মোবাইলফোনে বলেন, ‘সাংবাদিকরা কেন্দ্রে ঢোকার পরে আপনাকে অবহিত করে- পারমিশন (অনুমতি) না। অবগত করবে আমরা এসেছি। এরপর এই সাংবাদিকরা দুইজন করে একটি ভোট কক্ষে ঢুকতে পারবে। ভোটকক্ষে গিয়ে ভিডিও ফুটেজ নিতে পারবে, দেখতে পারবে এবং বাইরে এসে লাইভ করতে পারবে।’
এ সময় তিনি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত যানবাহনের বাইরে যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোটের সময় নগরের চিত্র বদলে যায়। চিরচেনা যানজট, মানুষের ভিড় ছিল না। রাস্তা ছিল পুরো ফাঁকা। যানবাহন সংকটে ভোটাররা পথে পথে ভোগান্তি নিয়ে ভোট দিতে যান।
ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মোট দুই হাজার ৩১০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। কেসিসি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯।
খুলনায় মেয়র পদে পাঁচজন এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরইমধ্যে নগরের ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.