খুলনা বিভাগে করোনায় ৪৩ জনের মৃত্যু, খুলনায় মৃত্যু ১৩

খুলনা ব্যুরো: খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায়  করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩৯৪ জনের। গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) বিভাগে ৫২ জনের মৃত্যু এবং করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১১৬৫ জনের। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার ৫ হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ৫ জন, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনজন, জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজন, খুলনা সিটি মেডিকেল হাসপাতালে তিনজন এবং গাজী মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডাঃ সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় ৪ জন ও উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনায় মৃতরা হলেন- খুলনার নগরীর ধর্মসভা এলাকার আব্দুর রশিদ (৬৭), খালিশপুর মুজগুন্নির মুক্তার শেখ (৯০), মিয়া পড়া এলাকার এটিএম আনিসুজ্জামান (৫৬) ও গিলাতলা এলাকার সুশান্ত দত্ত (৫৫)। এ ছাড়া উপসর্গে একজনের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩৬ জন। যার মধ্যে রেড জোনে ৫৪ জন, ইয়ালো জোনে ৪৫ জন, আইসিইউতে ২০ জন এবং এইচডিইউতে ১৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮ জন।

খুলনার শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ বিটিসি নিউজকে জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃতরা হলেন- খুলনার রূপসার আইচগাতি এলাকার জাহানারা (৬০), খুলনার অলক রায় (৫৪) ও নড়াইলের কালিয়ার কামাল মোস্তফা (৭২)। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৪২ জন। তার মধ্যে আইসিইউতে রয়েছে ১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭ জন আর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ জন।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ বিটিসি নিউজকে জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাগেরহাটের কচুয়ার ফারজানা (৪৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫২ জন। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ২৭ জন মহিলা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৬ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৫ জন।
বেসরকারি গাজী মেডিকেল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দৌলতপুরের রাজন কুমার সাহা (৬০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৮ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৭ জন এবং এইচডিইউতে ৮ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবে ৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
এ ছাড়া খুলনা সিটি মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন- খুলনার বটিয়াঘাটার বিন্দু প্রকাশ গোলদার (৭০), রূপসার শাহজান ফকির (৬২) ও পিরোজপুরের প্রিয়াংকা(২৫)।হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ৭ জন এবং এইচডিইউতে ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ জন।
আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায়। বাকিদের মধ্যে খুলনায় ৯ জন, যশোরে ৮ জন, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ৪ জন করে; ঝিনাইদহে ২ জন, বাগেরহাট ও মাগুরায় ১ জন করে মারা গেছেন।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৯৯০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৬ হাজার ৩৫৪ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৭৪ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২১ হাজার ৭১২ জনের। মারা গেছেন ৫২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৯০৬ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬১ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৮ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৬ জন।
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৮২ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১০৫ জন এবং মারা গেছেন ৮২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৭৫৩ জন।
২৪ ঘণ্টায় যশোরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৬৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৭৮ জন। মোট মারা গেছেন ২৮৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৭০৮ জন।
২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৮০ জনের। মোট মারা গেছেন ৮১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৫১ জন।
মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মাত্র ৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৬০৮ জনের। মোট মারা গেছেন ৪৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৫০ জন।
ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫৭৬ জন। মোট মারা গেছেন ১৬৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ২০ জন।
২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪২১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৫৯১ জনের। মোট মারা গেছেন ৪৩৩ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ২৬৯ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫১৪ জন। মোট মারা গেছেন ১৪৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ২৯৫ জন।
মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৪৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২৩৬ জন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.