
♦ কিছু কেন্দ্রে সিসিটিভি ও পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ইভিএম ব্যবহার হবে
বিটিসি নিউজ ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন গতকাল শনিবার এ দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৫ মে। তফসিল অনুযায়ী এই দুই নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১২ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ এপ্রিল এবং প্রতীক বরাদ্দের তারিখ ২৪ এপ্রিল।
নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা এই তফসিল ঘোষণা করেন। এ সময় কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমেদ ও যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আছে অক্টোবর পর্যন্ত। রোজার পর এসব সিটির নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খুলনা সিটির একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে গত ২৯ মার্চ উপনির্বাচন হয়েছে। ওই সিটির সাধারণ নির্বাচনে এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো জটিলতা হতে পারে কি না, এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘ওই নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। কোনো জটিলতা হবে না। তা ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর। স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনযোগ্য পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কমিশন কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘আজ তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত এ ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না। সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা সামগ্রী অপসারণসহ নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেয়াদের কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে জুলাই মাসে সব সিটির নির্বাচন একসঙ্গে করতে পারত। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আলাদাভাবে নির্বাচন হওয়াতে আমরা এসব নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাতে বেশি মনোযোগ দিতে পারব।’ তিনি আরো জানান, গাজীপুর ও খুলনা সিটির নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন তৈরি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। কিছু কেন্দ্রে সিসিটিভিও ব্যবহার করা হবে।

প্রসঙ্গত, মেয়াদ অনুসারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ৮ অক্টাবরের মধ্যে। রাজশাহী সিটির নির্বাচন করতে হবে ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে। আর বরিশাল সিটির নির্বাচন করতে হবে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে। খুলনাসহ এসব সিটির নির্বাচন ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচিতদের প্রথম সভা হয় বিভিন্ন দিনে। প্রথম সভা থেকেই নির্বাচিতদের পাঁচ বছরের মেয়াদ গণনা শুরু হয়।
পাঁচ সিটির নির্বাচন একসঙ্গে না করা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে। ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’-এর সংশ্লিষ্ট ধারা অনুসারে মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্ববর্তী ছয় মাসের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয়। সে অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন গত ৮ মার্চ থেকে নির্বাচনযোগ্য হয়েছে এবং আগামী ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। একই বিধান অনুসারে খুলনা সিটি করপোরেশন গত ৩০ মার্চ তারিখ থেকে নির্বাচনযোগ্য হয়েছে এবং আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া আগামী ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের সব পরীক্ষা শুরু হবে যা ১৪ মে শেষ হবে। ২৩ মে শেষ হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। এ ছাড়া চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৭ মে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে এবং ১৬ বা ১৭ জুন হবে ঈদুল ফিতর। এসব বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন গাজীপুর ও খুলনায় আগামী ১৫ মে মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছে।
গাজীপুর নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলকে এবং খুলনার নির্বাচন পরিচালনার জন্য খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানায়, ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ১০৭ এবং নারী পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৮ জন। আর ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৮ এবং নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৬ জন।
গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরপরই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার পাড়া-মহল্লার বাসিন্দা ও আপনজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে পুরো মাত্রায় যোগাযোগ ও শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিল পদপ্রার্থীরা ভোটারদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানিয়ে অনানুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
তফসিল ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই দল থেকে মেয়র পদে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ, জল্পনা-কল্পনা। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.