খুলনায় লকডাউনকেই ডোন্ট কেয়ার, মাস্ক নেই ৮০ % লোকের মুখে

খুলনা ব্যুরো: মারণ ভাইরাস নভেল করোনার সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। ৫ম দিনে গড়ালো প্রথম দফার কঠোর লকডাউন। বাড়ানো হয়েছে আরো এক সপ্তাহ। লকডাউন কার্যকরে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি। তা সত্ত্বেও দিন কে দিন মানুষ বেপরোয়া হচ্ছেন।
এই লকডাউনকেই “ডোন্ট কেয়ার” করে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে শহরের জনগনকে। শহরের অলিগলিতে লকডাউন কার্যত মানাই হচ্ছে না। পুলিশ এলাকায় যতক্ষন টহল দিচ্ছে রাস্তা থেকে তখন লোক সরে যাচ্ছে।
আবার পুলিশ চলে যেতেই ফের যেই কে সেই। রাস্তার ধারে একসঙ্গে বসে আড্ডা মারা, চা খাওয়া, ভিড় করে দোকানবাজার করা, অহেতুক গলিতে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরা, সবই চলছে। একই সাথে বাজারগুলো ২টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও তা সন্ধ্যার পরও যথারীতি চলছে।মাস্ক নেই ৮০ % লোকের মুখে।  কে বলবে, লকডাউন নির্দেশিকা জারি আছে।
হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে করোনা নামক মরণঘাতী ভাইরাস। “ডাক্তার হয়েও রোগীর সেবা দিতে পারলাম না। চোখের সামনে মারা গেল”-অসহায় আর্তনাদ খোদ চিকিৎসকের। চিকিৎসকরা এতটাই করুণ পরিস্থিতির স্বীকার যে, হাসপাতালে রোগী এলে তাদের কণ্ঠে করুণ উচ্চারণ-“কেউ মারা গেলে তবেই বেড ফাঁকা হবে।” চিকিৎসকদেরই বা কি করার আছে! আইসিউইউ, সাধারণ বেড এমনকি ফ্লোর এবং ওয়ার্ডের করিডোরেও রোগী ধারণের ঠাঁই নেই।
হাসপাতালগুলোতে দিন-রাত বাড়ছে রোগীর চিকিৎসা না পাওয়া স্বজনদের হাহাকার। খুলনা মেডিক্যালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে  শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন। ফলে সামনের দিনে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে!
আইনশৃখংলা বাহিনীর সদস্যদের নজর এড়িয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মাঝে মধ্যে ভ্যান, ইজিবাইক, মটর সাইকেল ও ট্রাক চলতে দেখা গেছে। তবে শহরের অধিকাংশ দোকারপাট বন্ধ রয়েছে। শহরের কিছু কিছু জায়গায় লকডাউন মানলেও গ্রামাঞ্চলের চিত্র ভিন্ন। চলছে চোর পুলিশ খেলা।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও জীবনাচরণ দেখে মনে হয় তারা করোনাকে মোটেও গরজ করছে না। হাট-বাজার, চায়ের দোকান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট সহ সর্বত্র মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং অবাধ বিচরণ দেখে মনে হচ্ছে না-দেশে করোনা বলে কোনোকিছু আছে।
লকডাউনে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার গণপরিবহন। খুলনায় চলছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি। শহরে প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। লকডাউন সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক ও মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন পুলিশসহ বিজিবি।
লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে বাঁশ দিয়ে অনেক সড়কের প্রবেশ পথ আটকে দিয়েছে পুলিশ। জেলার ৯ থানায় ২৬টি চেকপোস্ট বসানো রয়েছে। খুলনার সঙ্গে সাতক্ষীরার সংযোগ চুকনগর, যশোরের সঙ্গে সংযোগ যুগনীপাশা ও বাগেরহাটের সঙ্গে সংযোগ কুদিরবটতলায় নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
খুলনায় ২ প্লাটুন বিজিবি নেমেছে। সেনাবাহিনীর ব্যাটালিয়ন সকাল ১১টার পরে মাঠে নেমেছে। ৯টি উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড সেনাবাহিনীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.