খুলনায় প্রেসব্রিফিংয়ে ২০ দলের মেয়রপ্রার্থী মঞ্জু : সরকার চায় ভোটাররা যেনো ভোট কেন্দ্রে না যায়

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : বিএনপি মনোনীত কেসিসি’র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, সরকার চায় ভোটাররা যেনো ভোট কেন্দ্রে না যায়। রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলো যেনো সরকারি দলের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে। গত কয়েকদিনে লক্ষ্য করেছি, একটি বিশেষ পরিবারের সদস্যরা খুবই কর্মতৎপর ছিলেন খুলনায়। কি একটা মেসেজ তারা দিয়ে গেলেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে গভীর রাতের বৈঠকে। এতে আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ শহরের মানুষ বিএনপিকে ভালবাসে, ধানেরশীষকে ভালবাসে এবং ধানের শীষে ভোট দিতে তারা অভ্যস্ত।

সেই শহরের মানুষদের রায়ের প্রতি যাদের আস্থা নাই, তারা কানাগলি খুঁজছেন। শেখ পরিবারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- এই ছোটখাটো নির্বাচনে না জড়িয়ে জাতীয়ভাবে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন নিয়ে ভাবুন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা অসৎ উদ্দেশ্যে তাদেরকে ব্যবহার করতে চায়। তাঁরা যেনো সেই অসৎ উদ্দেশ্যে, অসৎ স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত না হন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেহারা বলছে- কি একটা নির্দেশনা তাদের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কেএমপি কমিশনারের কাছে এসব বিষয়ে তুলে ধরবো। আমরা চাই কেসিসি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

এটা সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়; ফলে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে সরকার ভুল করেও হস্তক্ষেপ করবে না। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত। গণমাধ্যম পজিটিভ সংবাদ পরিবেশন না করলে ভোটারদের শঙ্কা আরও বাড়তে পারে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কে.ডি ঘোষ রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে চেয়ারপারসনের ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। প্রতীক পেয়ে প্রচার যাত্রার শুরু থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মীদের জনগনের পাশে থেকে অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথেই পিতা-মাতার কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা শুরু করবেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু না হয়, এই নির্বাচনে যদি ভোট ডাকাতি হয়, এটিই হবে সরকারের গলার কাটা। দেশের একটি জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় ১৬ কোটি মানুষ এবং সারাবিশ্ব। চীন, ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতও বলেছে একটি অংশ গ্রহনমুলক অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। তাই এই নির্বাচনে যদি ভোট ডাকাতি হয়; তাহলে বাংলাদেশে অংশগ্রহনমুলক নির্বাচন হবে না।

কারণ সরকার যে ভোট ডাকাত, আওয়ামী লীগ যে আগামী নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করবে সেটি প্রমাণিত হবে। একই সাথে নির্বাচন কমিশনের কোমর যে শক্ত; যেটি এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হবে। এখানে যদি ভোট ডাকাতি হয়, তাহলে বিএনপি কর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। বিএনপি কর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েছে ভোট ডাকাতি প্রতিরোধের। ভোটারদের সাথে নিয়ে সেই ডাকাতদের প্রতিরোধ করা হবে ইনশাআল্লাহ্। আমরা কোনভাবেই ভোট ডাকাতি করার সুযোগ দেবো না; এমনভাবেই বিএনপি তৈরি হচ্ছে।
নগরীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে মেয়র প্রার্থী মঞ্জু বলেন, নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুকের বাড়ীতে গিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।

তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়েছে। একই বাহিনী ১০/১৫টা মোটরসাইকেল নিয়ে ৯০ দশকের সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে শাসানো হয়েছে, হুমকি দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ৩০নং ওয়ার্ডে সাবেক হুইপের ভাই দারা বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেবার হুমকি দিয়েছেন। ৩১নং ওয়ার্ডে একজন দাঙ্গাবাজ ছাত্রলীগ নেতা ও তার কর্মীরা ওখানে একই হুমকি দিচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে। ১৫নং ওয়ার্ডের সহ-সভাপতির বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। পুলিশকে আমরা বলেছি, সন্ত্রাসীর তালিকা বানাতে।

পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা বানিয়ে অভিযান শুরু করেছে। এখানে ডন বাহিনী, কোন বাহিনী, বিভিন্ন বাহিনী আছে। যারা মানুষ হত্যা করেছে। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে, সেখানের ভোটের ফলাফল ছিনতাই হয়েছে। খুলনা শিশু ফাউন্ডেশনের নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে। এই শহরে ভূমিদস্যুতা করেছে, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে পিটিআই মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষ খুন করেছে। চাঁদাবাজী করেছে, টেন্ডারবাজী করেছে; পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের নাম নাই।

এই শহরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে যারা মিথ্যা ও হয়রানিমুলকভাবে পুলিশের দেয়া সাজানো-পাতানো মামলার আসামী হয়েছে আজকে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কেন? যেনো তারা মাঠ ছেড়ে চলে যায় এই সাহসী কর্মীরা। এই শহরের মাদকের প্রসার ঘটার খবর শহরবাসীকে উদ্বিগ্ন করেছে। বিনাভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির দুদকে তলব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া প্রতিবেদন; এ নিয়ে সরকারি দল আবার নতুন প্রচারে নেমেছে। যে প্রচার হাস্যকর। সংখ্যালঘুদের কথা উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, শীতলাবাড়ীর সামনে একজন পূজারী মহিলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে।

সেই হত্যার আসামীরা গ্রেফতার হয়নি। বিচার হয়নি। খুলনার হিন্দু সমাজ আজ উদ্বিগ্ন। তাদের অনেকের বাড়ি-ঘর টানা দুই সরকারের শাসনামলে দখল হয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে- এই ধরণের তালিকা প্রস্তুত না করে সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রস্তুত করুণ। তফসিল ঘোষণার পরেই সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ নয়দফা স্মারকলিপি দিয়েছিলাম নির্বাচন কমিশনে। যার একটি দফাও নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ন করেনি। এতে কি বোঝা যায়- বর্তমান সরকারের গড়া নির্বাচন কমিশন কতখানি আজ্ঞাবহ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নের এই অপতৎপরতা। সেকারণেই সেনা বাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন; তা না হলে জনগন নিরাপদ থাকবে না। বিএনপি কর্মীরা নিরাপদ থাকবে না, ২০দলের কর্মীরা নিরাপদ থাকবে না।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাড.শফিকুল আলম মনা, শাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সৈয়দা নার্গিস আলী, আমীর এজাজ খান, মীর কায়সেদ আলী, আব্দুল জলিল খান কালাম, সৈয়দা রেহেনা ঈসা, এস এ রহমান, মোঃ ফকরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রশিদ, আসাদুজ্জামান মুরাদ, এহতেশামুল হক শাওন ও শামসুজ্জামান চঞ্চল প্রমুখ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.