খুলনায় পাটকল বন্ধের সরকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে সন্তানদের নিয়ে মিলগেটে শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি, জেলা প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলন

খুলনা ব্যুরো: সন্তানদের নিয়ে মিলগেটে অবস্থান করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা মিল বন্ধের সরকারী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, করোনার এই মহামারীর সময় মিল বন্ধ করে তাদেরকে বেকার করে দেয়া হলে তাদের মৃত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা থাকবে না।

এজন্য পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ জুন)  দুপুর থেকে তারা ২৪ ঘন্টার জন্য মিলগেটে অবস্থান করবেন। এর মধ্যেও সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে আগামী বুধবার দুপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারা মিলগেটে আমরণ অনশন করবেন।

আজ সোমবার (২৯ জুন) অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পাটকল শ্রমিকরা বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান একজন মানবিক ব্যক্তিত্ব। তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব দরবারে সুনাম কুড়িয়েছেন। তার মত একজন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর আমলে পাটকল বন্ধ হতে পারে না। শ্রমিকদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে মিল বন্ধের জন্য তার সম্মতি নেয়া হয়েছে। এজন্য কিছু আমলা এবং এক শ্রেণির বিত্তশালী রাজনীতিবিদ দায়ী। শ্রমিকরা জানান, দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ হলে শুধু ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার হবে না, বরং পাট শিল্পের সাথে জড়িত দেশের প্রায় তিন কোটি লোকের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থা থেকে সরকার অবশ্যই ফিরে আসবে বলেও শ্রমিক নেতারা মনে করেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষা সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার সকাল নয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরীর খালিশপুরের চারটি, দিঘলিয়ার একটি, আটরা শিল্পাঞ্চলের দু’টি এবং যশোরের নওয়াপাড়ার রাজঘাটের দু’টি পাটকলের গেটে সন্তানদের নিয়ে অবস্থান নেয় স্ব স্ব মিলের শ্রমিকরা।

এদিকে, চলমান সমস্যা নিরসনে দেশের ২৫ টি পাটকলের সিবিএ নেতারা ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রানলয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সাথে বৈঠক করেছে। শ্রম দপ্তরে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা বৈঠক চললেও তেমন কোন সুরাহা হয়নি।

ঢাকা থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএর সভাপতি সাহানা শারমিন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর নিকট শ্রমিকদের মিলের চালু রখাসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জানানো হয়েছে। আন্দোলনের বিষয়ে তিনি জানান, তাদের কর্মসুচি অব্যাহত থাকবে। তবে আগামী ১ জুলাই’র পর মিল চালু থাকলে খুলনার ৯ পাটকলের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে পরবর্তি কর্মসুচি ঘোষনা করবে।

ঢাকার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরদার আঃ হামিদ, সাহানা শারমিন, মাওঃ হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, বেল্লাল মল্লিক, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, আক্তার হোসেন, তোফাজ্জেল হোসেন, মাহবুবুল আলম, আরিফুর রহমান, জিল্লুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আকবর হোসেন, রফিকুল ইসলাম।

এছাড়া পূর্ব নির্ধারিত কর্মসুচি অনুযায়ী খুলনার ৯ পাটকলের গেটে শ্রমিকরা তাদের স্কুল পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে মিলগেটে অবস্থান নেয়। সেখানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মিলগুলিকে চালু রেখে শ্রমিক সন্তানদের পড়া লেখা, দু বেলা খেয়ে পওে বেচেঁ থাকার আকুতি জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। শ্রমিকরা বিজেএমসিকে বিলুপ্ত ও মিলগুলিকে আধুনিকায়ন করে সরকারি ভাবে চালু রাখার দাবি জানান।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তৃতা করেন, সোহরাব হোসেন, মুরাদ হোসেন, আবু হানিফ, কওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, দ্বীন ইসলাম, হেমায়েত উদ্দিন, আবুল কালাম জিয়া, নূর ইসলাম, গাজী মোশারফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম লিটু, আব্দুল মান্নান খান, মতিয়ার রহমান, মনিরুল ইসলাম শিকদার প্রমুখ।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিরজমান পরিস্থিতিতে খুলনা জেলা প্রশাসন আজ সোমবার সার্কিট হাউজে এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে।  প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালকদার আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই সরকার এ পর্যন্ত পাটকলগুলোতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে মিলগুলোর আধুনিকায়ন করেই চালু করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে মিলগুলো বন্ধ হবে না, আবার শ্রমিক বেকারও হবে না। কারণ পরবর্তীতে এসব মিলে  শ্রমিকদেরই কর্মসংস্থান অব্যাহত থাকবে।
প্রেস কনফান্সে জেলা প্রশাসক জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী দুই মাস আগে অর্থাৎ আগামীকাল (৩০ জুন) সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ইতোমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভায় এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৪০ শতাংশ এবং বাকি ৬০ শতাংশ পাওনা টাকা পরবর্তী দু’টি অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ করে পরিশোধ করা হবে। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের পাওনা এককালীন পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিটি শ্রমিক প্রায় সাড়ে ১২ লাখ থেকে ৫৪ লাখ পর্যন্ত টাকা পাবেন। মিলগুলো পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চালু হলে এসব মিলে কর্মরত দক্ষ শ্রমিকরাই নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
প্রেস কনফান্সে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসালম, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুপ আলী, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.