খুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪ লক্ষ এর অধিক মানুষ, ৮২ হাজারের বেশী ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত, কয়েক হাজার মৎস্য ঘের প্লাবিত

খুলনা ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের  খুলনায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বিদ্ধস্ত হয়েছে ৮২ হাজারের বেশী ঘরবাড়ি। অর্ধলাখ মানুষের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। উপকুলীয় পাঁচটি উপজেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হাজার হাজার কাঁচা ও সেমিপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। খুলনা মহানগরী থেকে শুরু করে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় অর্ধলাখ মানুষের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে জমির ফসল।

এদিকে কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধ গতকাল বুধবার রাতে ভেঙ্গে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকালের জোয়ারে বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি এখন পানির নিচে। কয়রা উপজেলা সদরও জোয়ারের পানিতে ভাসছে।

ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে বুধবার রাত থেকেই কয়রা উপজেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে অবস্থান করছিলেন স্থানীয় সাংসদ আকতারুজ্জামান বাবু। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নদীর পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রামের পর গ্রাম লোনা পানিতে ভাসছে। দ্রুত ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করা না গেলে এ লোনা পানিই দীর্ঘস্থায়ী বিপদ ডেকে আনবে।

তিনি বলেন, শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। হাজার হাজার গাছ ভেঙ্গে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতোই বেশি যে, হিসাব বের করতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এমন ভয়ানক ঝড় অনেকদিন দেখেনি উপজেলার মানুষ।

এদিকে দাকোপ উপজেলার বেড়িবাঁধ রক্ষা পেলেও কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায় , খুলনা জেলার ৯ উপজেলার উপকূলীয় ৬৮ ইউনিয়নের মানুষ আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ জেলায় ক্ষতির পরিমানে এগিয়ে আছে ক্রমান্বয়ে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলা। অন্য চারটি উপজেলায় ক্ষতির পরিমান খুবই কম।

এছাড়া, দমকা বাতাসের প্রভাবে কোনো কোনো স্থানে গাছপালাও উপড়ে পড়েছে। তবে মাঠে থাকা বেশিরভাগ ধান আগাম কেটে ফেলায় এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত নির্ণয় করতে। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ারদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, খুলনায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়রা উপজেলার মানুষ। সেখানে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাড়িঘর বিধস্ত হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে খুলনার পাঁচটি উপজেলার কয়েক হাজার মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা মৎস অফিস বলছেন, আম্ফানের তান্ডবে খুলনার উপকূলীয় পাঁচটি উপজেলায় মৎস ঘেরের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমানে শীর্ষে রয়েছে পাইকগাছা উপজেলা। তবে তুলনা মূলক কম ক্ষতি হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলায়।

জেলার পাইকগাছায় উপজেলায় মৎস ঘেরের ক্ষতির পারিমান ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, বটিয়াঘাটায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, কয়রায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ডুমুরিয়ায় ৭০ লাখ টাকা ও দাকোপে ১৫ লাখ টাকা। সর্বমোট জেলায় ক্ষতির পরিমান ১৮ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় সূত্রে এই ক্ষতির পরিমান আরো বেশি বলে জানা গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাঈদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখানো পুরোপুরি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকে প্রায় ১৮ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পরিমান আরো বাড়তে পারে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.