খুলনার আউটসোর্সিং কর্মচারীদের চাকরী ফেরত এবং বকেয়া বেতনের দাবীতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি

খুলনা ব্যুরো: খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ সিভিল সার্জনের আওতাধীন বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২১১জন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে চাকরীতে বহাল রাখাসহ বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য খুলনার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের কাছে গতকাল বুধবার বিকেলে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাদের কথা ধৈর্য ধরে শোনেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। প্রদত্ত স্মারকলিপিতে বলা হয়, আজ থেকে দেড় বছর আগে খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন জেনারেল হাসপাতাল এবং নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগ দেন ২১১জন কর্মচারী।
তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ বা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হন। যখন চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মরতদের মধ্যে ছিল আতংক তখন অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় তারাই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু আজ তারা অনেকটা অসহায়। হতে হচ্ছে চাকরীহারা। আশা ছিল নবাগত সিভিল সার্জন তাদের দিকে সদয় দৃষ্টি দেবেন, কিন্তু তিনিও তাদেরকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন ঠিকাদারকে কাজ দেয়ায় আজ তারা চাকরীহারা হতে চলেছেন।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২১১ জন কর্মচারী নিয়োগ পান। মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা চাকরীতে যোগদান করলেও প্রায় ১৩ মাস পর গত বছর (২০২০) জুলাই মাসে আমরা এক বছরের বেতন পান।
কিন্তু এর পর থেকেই আবারো বেতন বন্ধ থাকে। এরই মধ্যে ঠিকাদার পরিবর্তনের গুঞ্জন শোনা যায়। সম্প্রতি বিদায় নেয়া খুলনার সিভিল সার্জন ডা: সুজাদ আহমেদ তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘তোমাদের চাকরী নেই’।
এজন্য তিনি একটি অফিসিয়াল চিঠিও ইস্যু করেন। যদিও তিনি নিজেই তাদের সেবা নিয়ে থাকেন। অন্যান্য সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা তাদের সেবা নেন। সর্বশেষ তৎকালীন সিভিল সার্জন তাদেরকে নতুন ঠিকাদার কন্টাক্ট ক্লিনিংয়ের মালিক হেমায়েত হোসেন ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
কিন্তু ঠিকাদার ফারুক তাদের ফোন রিসিভ করেন না। পক্ষান্তরে বিভিন্ন লোক মারফত তাদের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয় ‘যদি তোমাদের চাকরীতে বহাল থাকতে হয় তাহলে মোটা অংকের অর্থ দিতে হবে’।
এজন্য কারও কারও কাছে টাকার অংকও উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, যদি চাকরীতে বহাল থাকতে হয় তাহলে দুই লক্ষ করে টাকা দিতে হবে। কিন্তু তারা গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ধার দেনা করেই তাদের চলতে হয়।
বিগত ছয় মাস ধরে বেতন না থাকায় ডিউটি করতে হচ্ছে খেয়ে না খেয়ে। এর পরও এতো বিপুল পরিমান টাকার চাপ দেয়ায় তারা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। তাদের কাছে টাকা না পেয়ে তিনি তাদেরকে বাদ দিয়ে বাইরের লোক নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পদায়ন দিচ্ছেন।
এক পর্যায়ে তৎকালীন সিভিল সার্জন গোপালগঞ্জে বদলী হলে তারা মনে করেছিলেন নবাগত সিভিল সার্জন তাদের দিকে সদয় হবেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের দিকে তাকাবেন। কিন্তু দেখা গেলো তিনি যোগদান করেই বর্তমান ঠিকাদারের সাথে তিন মাসের চুক্তি করে নতুন নিয়োগকৃত আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পদায়ন দিয়েছেন। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একজন ঠিকাদারের সাথে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তির কোন বিধান আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে এ সংক্রান্ত আরও বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। এসময় আউটসোর্সিং কর্মচারীরা জেলা প্রশাসকের সামনে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমাদের চাকরী ফিরিয়ে দিন, আমাদের পরিবারের প্রতি সদয় হোন, আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দিন’ ইত্যাদি নানা বিষয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.