খুলনায় সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক 

খুলনা ব্যুরো: নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার গল্লামারী মোড়, এম বারী সড়ক এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া ২০ পুলিশসহ আহত হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারসেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেণেড নিক্ষেপ করেছে। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল ছোঁড়ে।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুর তিনটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র শিক্ষার্থীরা শুক্রবার দুপুর ২টায় খুলনা নিউ মার্কেট এলাকায় জড়ো হতে থাকে। সেখানে প্রথম দফায় বৃষ্টির বাগড়া ও পুলিশের বাঁধায় তারা জড়ো হতে পারেনি। পরে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করতে থাকে। মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ স্মরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার সামনে দিয়ে যায়। সোনাডাঙ্গা থানার সামনে গেট লাগিয়ে পুলিশ পাহারায় ছিলো। এসময় কিছু শিক্ষার্থী পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকে।
পুলিশ অবস্থা বিবেচনায় গেট লাগিয়ে ভেতরে চলে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা থানা লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে। এসময় থানার জানালার গ্লাসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে যায়। পরে মিছিলটি গল্লামারী ব্রীজ পার হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছায় বিকেল তিনটার দিকে। সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। বাকি অংশ জিরো পয়েন্টের মোড়ে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ভ্যরিকেড ভাঙতে চাইলে পুলিশ কয়েকদফা টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইট পাটকেল ছোঁড়ে। সেখানে কয়েকজন রাব্বী, ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের যোগ দিতে দেখা যায়। পরে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে। পরে তারা জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেয়। তাদের দুই পাশ দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। এসময় সেখানেও টিয়ালসেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এরপর বিকেলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ি মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় সাড়ে ৫টার দিকে গল্লামারী মোড়ে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। ব্রীজের অপর প্রান্ত থেকে মুর্হুমূর্হু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেণেড ছোড়ে পুলিশ। এতে পুরো গল্লামারী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পথচারীসহ একাধিক মানুষ আহত হয়। এই ঘটনার পর গল্লামারী ব্রীজের এক পাশে শিক্ষার্থী ও অপর পাশে পুলিশ অবস্থান নেয়।
এই ঘটনার সময় চারজন পুলিশ গল্লামারী কাঁচাবাজারে দলছুট হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন দলছুট পুলিশ সদস্যদের খবর জানতে পারে। তারা ওই পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। এসময় ওই চার পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন হঠাৎ’ করে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। পরে সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সুমন কুমার ঘরামী নামে একজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখে। অপর তিনজন পালিয়ে যেতে চাইলে তাদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম নামে আরেকজনকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সুমন মারা যায়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গল্লামারী ব্রীজের অপর পাশে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে আগুন দিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এম এ বারী সড়ক ও শেরে বাংলা সড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলে এই সংঘর্ষ। এসময় বিপুল পরিমান গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে সঙ্গবদ্ধ হয়ে বিক্সুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফের মিছিল বের করে। তারা ২৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। এদিকে সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের সময় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আটকা পড়ে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
সংঘর্ষের বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বিটিসি নিউজকে বলেন, শুধু শিক্ষার্থী হামলা করেনি। দুর্বৃত্তরা খুলনাকে অশান্ত করতেই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অনেক সদস্য আহত আছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বিটিসি নিউজকে বলেন, পুলিশের একজন সদস্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একটি গ্রুপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.