খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ

খুলনা ব্যুরো: খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মার্চ ফর জাস্টিস পালন কালে পুলিশের সংগে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ২ টা থেকে শুরু হয়ে এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। আন্দোলনকারীদের দাবী এতে ৬০ এরও অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
নগরী থেকে আটক করা হয়েছে অন্তত একশ জনকে।
নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভকালে বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি দুই দিক দিয়ে আটকে রাখে। এতে উত্তেজনায় এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে নগরীর বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর রয়েল মোড় ও ময়লাপোতা মোড়ে মিছিলের চেষ্টাকালে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃংখলা বাহিনী। সড়কে যাতায়াতকারীদের মোবাইল ফোন চেক করে লাল প্রোফাইল দেখলেই তাদের আটক করা হয়। মোট কতো জনকে আটক হয়েছে, সেই তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের হাতে আটক আইডিয়াল কলেজের ছাত্রী অপরূপার মা দাবি করেন তার মেয়ে বাসা থেকে না বলে রয়্যালের মোড়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলন করতে আসে। পরে পুলিশ ১৭ জন শিক্ষার্থীকে আটক করে সদর থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েসহ ১১ জন মেয়ে রয়েছে।
আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান বলেন, দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত রয়েছি। কতজন শিক্ষার্থী আটক হয়েছে এখন বলতে পারবো না।
দুপুর ১টার দিকে ময়লাপোতা মোড়ে পুলিশে ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আহসানুল্লাহ কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা ভবনের ভেতর একটি কক্ষে প্রবেশ করে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে নিহত ছাত্রদের হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ছিল। ‍খুলনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় রয়েল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে নগরীর রয়েল মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বেলা ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা রয়েল মোড়ের আশপাশে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের মোবাইল ফোন চেক করে করতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে তারা ময়লাপোতার মোড়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে আটক করা হয় ১৭ জনকে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কেডিএ অ্যাভিনিউ দিয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ময়লাপোতা মোড়ের দিকে এবং কিছু সাতরাস্তার মোড়ের দিকে চলে যায়। এ সময় দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ময়লাপোতায় আবার শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। তখন কিছু শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ কলেজে আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ শেরে বাংলা সড়ক দিয়ে ময়লাপোতা মোড়ে প্রবেশ করে সিটি মেডিকেল কলেজের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিল ওই এলাকায় আসলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাত এড়াতে ময়লাপোতা মোড়ে বিপুল সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
বেলা ২টার দিকে বেশকিছু শিক্ষার্থী সাতরাস্তা মোড়ে সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবস্থানে লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভিপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার ছাত্রদের যোগ দিতে দেখা যায়। পুলিশের মুহুমুহু টিয়ার সেল, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ে আতংকে ওই সব এলাকার দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ১১টার দিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় খুলনার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ।
খুলনা সার্কিট হাউজে খুলনা সিটি মেয়র, সংসদ সদস্য ও উপ-পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠকের পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ, প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের পক্ষে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তানভির আহমেদ। আর আজম খান কমার্স কলেজের পক্ষে ঘোষণা দেন শেখ রাসেল।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.