খুলনা ব্যুরো: শনিবার (২৯ মার্চ) গভীর রাতে খুলনার বানরগাতি আরামবাগ এলাকায় এক নির্মাণাধীন বাড়িকে ঘিরে রীতিমতো রণক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশের সঙ্গে তিন ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের পর ধরা পড়ে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ শেখ ও তার সহযোগী কালা লাভলুসহ ১০ জন।
ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, দেশীয় অস্ত্র এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে চাঞ্চল্য
শনিবার রাত ১টার দিকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পুলিশ বানরগাতি আরামবাগ এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ি ঘিরে ফেলে। প্রথমে স্থানীয়দের মাঝে কৌতূহল ও উত্তেজনা থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত সোয়া ১টার দিকে শুরু হয় পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলিবিনিময়, যা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে।
রবিবার (৩০ মার্চ) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ সময় তারা প্রায় ৮০-৯০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে, যার জবাবে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৪৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নৌবাহিনী সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেয়। পুলিশ ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে সন্ত্রাসীরা একপর্যায়ে পিছু হটে। অভিযানের শেষ দিকে নির্মাণাধীন ভবনটি থেকে একে একে বের হয়ে আসে সন্ত্রাসীরা, যাদের মধ্যে খুলনার কুখ্যাত পলাশ শেখ, কালা লাভলু, নুরে আলম সিদ্দিকী লিয়ন শরীফ, ট্যাটু ইমরানসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আহত ৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য
এই অভিযান চলাকালীন পুলিশের ৭ সদস্য এবং নৌবাহিনীর একজন সদস্য আহত হন। আহতদের খুলনা পুলিশ হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আহত সন্ত্রাসীদের রাখা হয়েছে প্রিজন সেলে।
অভিযানকালে ৩টি পিস্তল , ১টি শর্টগান, ৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ২৩ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চা-পাতি, ১টি হাসুয়া, ২টি চাকু, ৪টি মোবাইল ফোন, ৭টি মোটরসাইকেল (৫টির নম্বর প্লেট রয়েছে, ২টি নম্বরবিহীন) ও নগদ ১০ হাজার টাকা।
আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা ও পরিচয়
পলাশ শেখ: মোট ১৪টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ২টি হত্যা, ৩টি ডাকাতি, ১টি অস্ত্র মামলা, ২টি চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ অন্তর্ভুক্ত।
কালা লাভলু: ৬টি মামলায় আসামি – ডাকাতি, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া নুরে আলম সিদ্দিকী ওরফে লিয়ন শরীফের নামে ২টি মামলা, ইমরান হোসেন ওরফে ট্যাটু ইমরান ১টি মামলা, ফজলে রাব্বি রাজন, রিপন ও ইমরানুজ্জামান প্রত্যেকে ১টি করে মামলার আসামি।
মোটরসাইকেলগুলোর মালিকানা যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ কমিশনার বিটিসি নিউজকে জানান, খুলনার ১২ জন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ১০ জন বর্তমানে কারাগারে এবং বাকি দুইজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। খুলনার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন ও ফিন্যান্স) আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ, স্টাফ অফিসার অপারেশন (খালিশপুর) লে. কমান্ডার মো. সামিউর রহমান (বিএন), অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ও সিপি) মোহা. আহসান হাবীব, পিপিএম ও সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান মাশরুর মুর্শেদ। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.