খুলনা ব্যুরো:খুলনার আলোচিত তাজকির আহম্মেদ হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানায়। প্রেমের সম্পর্ক, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশোধের জালে আটকা পড়ে এক তরতাজা যুবকের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (KMP) হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও সহযোগীদের গ্রেফতারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, তাজকির আহম্মেদের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ খালিশপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন (জিডি নং- ১১৫৪)। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার ভাই ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনায় এসে মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং পরে প্রেমিকা সীমার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
পরবর্তী সময়ে, নিখোঁজ যুবকের পিতা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২-৩ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন (খালিশপুর থানার মামলা নং- ২২, তারিখ- ২৫/০২/২০২৫, ধারা- ৩৬৫/৩৪ পেনাল কোড)।
তদন্ত চলাকালে, ২৭ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানা পুলিশ খানজাহানআলী থানাধীন ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাটে বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ নিখোঁজ ডায়েরির আবেদনকারী ও তাজকিরের পরিবারের সদস্যদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়, যেখানে তারা লাশের পরিহিত পোশাক দেখে তাজকিরকে শনাক্ত করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (KMP) তদন্তে উঠে আসে একটি জটিল প্রেমের সম্পর্কের গল্প। ভিকটিম তাজকির আহম্মেদ তার মামাতো ভাই রনির শ্যালিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু সীমার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভিও তার জীবনে ফিরে আসেন, এবং গোপনে দুজনের সাথেই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন সীমা।
পরবর্তীতে অভি জানতে পারেন, তার প্রাক্তন স্ত্রী সীমা তাজকিরের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভি প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
অভি প্রেমিকার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তাজকিরকে খুলনায় আসতে বলেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, তাজকির খুলনায় পৌঁছানোর পর তাকে অপহরণ করে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভি ও তার সহযোগীরা তাজকিরকে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন, মুখে কসটেপ পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন এবং লাঠি দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেন। নৃশংসতার চরম পর্যায়ে গিয়ে তার পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। শেষে গলায় রশি পেঁচিয়ে নিশ্চিত করা হয় মৃত্যু।
পরবর্তীতে, হত্যাকারীরা বস্তা ক্রয় করে লাশ ভরে ইজিবাইকে করে হার্ডবোর্ড খেয়াঘাটে নিয়ে যান। সেখানে পূর্বে ভাড়া করা ট্রলারের সাহায্যে দৌলতপুর যাওয়ার পথে নদীর মাঝখানে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামি, ১) সুরাইয়া আক্তার সীমা, ২) লাবনী বেগম এবং ৩) শহিদুল ইসলাম সাহিদকে গ্রেফতার করে এবং আদালতে সোপর্দ করে।
১৬ মার্চ ২০২৫, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি, ৪) মশিউর রহমান জিতু (২৪) এবং ৫) রিয়াদ কাজী (২২) কে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাজকির হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এছাড়া, হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত ইজিবাইকের চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের মতে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ইসমাইল হোসেন অভি এখনও পলাতক রয়েছে। তার অবস্থান শনাক্তে পুলিশের অভিযান চলছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.