খুলনাঞ্চলের জুট মিল গুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দাবীতে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ

খুলনা ব্যুরো: খুলনার আটরা ও মিরেরডাঙ্গা শিল্প অঞ্চলের ব্যক্তি মালিকানা মহাসেন,সোনালী, এ্যযাক্স,আফিল জুট মিল ও হুগলি বিস্কুট কোম্পানি ও জুট স্পিনার্স সহ বছরের পর বছর বন্ধকৃত মিলগুলি পুনরায় চালু ও শ্রমিক কর্মচারীদের চুড়ান্ত পাওনা এককালিন পরিশোধ, এ্যাযাক্স মিলের মালিক দাবি কারি কাওসার জামান বাবলা কর্তৃক মিলের ম্যাশিনারীজ, গাছপালা কেটে বিক্রি করার পায়তারা করার প্রতিবাদে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম এর নিকট বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২ টায় স্মারকলিপি প্রদান করেছে বেসরকারী পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপ্রি প্রদান শেষে তার দপ্তরে প্রায় ৩০ মিনিট শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। জেলা প্রশাসক শ্রমিক নেতাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং অতিদ্রত শ্রম পরিচালক ও রেজিঃ অবঃ ট্রেড ইউনিয়ন এর সাথে আলোচনা করে এ সকল মিলের মালিকদের সাথে বৈঠক করে দির্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন,খুলনার বেসরকারী এসকল জুটমিলের মালিকরা সরকারের বিভিন্ন ব্যাংকের নিকট থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে কৃত্রিম অর্থ সংকট দেখিয়ে মিল গুলো বন্ধ করে রেখেছে বছরের পর বছর।
এর মধ্যে কোন কোন মিল ৩ বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর পূর্বে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হলেও এখনো পর্যন্ত শ্রমিকের গ্রাজুইটি ও পিএফ সহ কোন পাওনাই পরিশোধ হয়নি। ২০০৬ এর শ্রম আইনে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে ছাটাইকৃত শ্রমিকের পাওনা পরিষদের নিয়ম থাকলেও ১০ বছরেও শ্রমিকের গ্রাজুইটি ও পিএফ এর পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।
এদিকে এই সকল মিলের হাজার হাজার পরিবার অর্ধারে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় মানবতার জীবনযাপন করছে। শত শত শ্রমিক তাদের পাওনা টাকা না পেয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছে। এ্যযাক্স জুট মিলটি ২০১৪ সালে সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়, এখানে ১১০০ শ্রমিকের মোট পাওনা রয়েছে ৩০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ্যযাক্স জুট মিলের মালিকানা আঃ মান্নান তালুকদার ও কাওসার জামান বাবলা
দাবি করেন, এর মধ্যে আঃ মান্নান তালুকদার শ্রমিকদের কিছু টাকা পরিশোধও করেন। কিন্তু কাওসার জামান বাবলা মিল শ্রমিকের বকেয়া পাওনা কোন টাকা পরিশোধ না করে নিজেকে বিএনপি’র নেতা দাবি করে প্রভাব খাটিয়ে মিলের বিল্ডিং, মিলের যন্ত্রাংশ, গাছপালা কেটে বিক্রি করার পায়তারা করছে। শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত চুড়ান্ত পাওনা পরিশোধ না করায় শ্রমিকের পক্ষ থেকে খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এবং কলকারখানা পরিদর্শন দপ্তর, খুলনা কাওসার জামান বাবলার নামে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে উক্ত মামলায় আদালতে দোষি প্রমানিত হওয়ায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাওসার জামান বাবলা শ্রমবান্ধব, সৎ, দক্ষ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মনগড়া ও কাল্পনিক এবং সম্পুর্ন মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে।
এছাড়াও শ্রমিকদের পাওনা যাতে পরিশোধ না করতে হয় সে লক্ষে নানা রকম ফন্দি করছেন। বাবলার এমন কর্মকাডে খুলনা অঞ্চলের জুট মিল শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা এবং হতাশা বিরাজ করছে ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের ভাবমূর্তি খুন্ন হচ্ছে ।অতিদ্রত কথিত বিএনপি নেতা দাবিকারী শ্রমিকদের দুশমন কাওসার জামান বাবলাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন,শিরোমনি মহাসিন জুট মিলটি ২০১৪ সালে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়, এখনো ৩৩৭ জন শ্রমিকের পাওনা প্রায় ১১ কোটি টাকা। মিরেরডাঙ্গা সোনালী জুটমিলটি ভাড়াটিয়া মালিকের মাধ্যমে আংশিক চালু আছে, ২৬ শত শ্রমিকের স্থলে কাজ করছে মাত্র ১৫০ জন।
এই মিলে শ্রমিকের পাওনা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। মহসেন জুট মিল থেকে মিলের নির্বাহী পরিচালক তাওহীদুল ইসলাম, ইতিপুর্বে জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মিলের সিবিএ নেতা রবিউল রবির মাধ্যমে রাতের আধারে মিলের ম্যাশানারীজ, সহ সকল মালামাল বের করে নেয়। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে নতুন করে নাটক শুরু করেছে নির্বাহী পরিচালক তাওহিদুল ইসলাম ও সিবিএ দালাল রবিউল ইসলাম রবি।
আফিল জুট মিলটি কয়েক বছর পূর্বে বন্ধ হয়েছে যা শ্রমিকের পাওনার কিছু অংশ মালিকপক্ষ পরিশোধ করলেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আংশিক টাকা দিয়ে কৌশলে শ্রমিকদেরকে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে সম্পূর্ন পাওনা পরিশোধের বিষয়টি লিখিয়ে নিয়েছে মালিক পক্ষ।
এই মিলে শ্রমিকের পাওনা প্রায় ৪০ কোটি টাকা।জুট স্পিনার্স মিলেটির শ্রমিকদের পাওনার চারটি কিস্তি করা হলেও দুইটি কিস্তি পরিশোধ করার পর সকল কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
শ্রমিকের পাওনা ২৮ কোটি টাকা। হুগলি বিস্কুট কোম্পানি ২০২১ সালে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়, যাহা শ্রমিকের প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ।দীর্ঘ বছর যাবত এই না খাওয়া শ্রমিক কর্মচারী তাদের গ্রাচুইটি ও পি এফ এর দাবিতে খুলনা জেলা প্রশাসক এর নিকট দফায় দফায় স্মারকলিপি, মানববন্ধন,সংবাদ সম্মেলন সহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও মালিকপক্ষ তা কর্ণপাত করছে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন , সাধারন সম্পাদক গোলাম রসুল খান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন খুলনা মহানগরী শাখার সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজি, মাহফুজুর রহমান। এ্যজাক্স জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিক নেতা আজাহার আলী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহসেন জুট মিলের শ্রমিক নেতা ক্বারী আসহাব উদ্দীন, আফিল জুট মিলের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দীন, বেসরকারি পাট সূতা বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক সাইফুল্লাহ তারেক- হুগলী বিস্কুট কোম্পানী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, আঃ ওহাব ও সাংবাদিক মিহির রজ্ঞন বিশ্বাস।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.