খুবিতে ‘কাজী নজরুল ইসলাম ও ১ম বিশ্বযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

খুবি প্রতিনিধি: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ‘কাজী নজরুল ইসলাম ও ১ম বিশ্বযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (১৮ ই মার্চ) কলা ও মানবিক স্কুলের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নানা প্রেক্ষাপট ও যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, যুদ্ধ আপনা আপনি হয় না। আসলে যুদ্ধ জিনিষটাই হচ্ছে সৃষ্টি করা। তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিহাসে এমন নজীরও আছে। প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে, ভূ-ভাগ দখলে, অন্যদেশের ও জাতিগোষ্ঠীর সম্পদ লুণ্ঠন করতে, শোষণ করতে অনেক যুদ্ধ হয়েছে এবং আজও হচ্ছে।

প্রাসঙ্গিকভাবে তুরস্কের কামাল পাশাসহ আরও অনেকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাসের যারা মহানায়ক তাদের টেনে কখনও নীচে নামানো যায় না।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত ৪৭ বছরে অনেকবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও নীচে টেনে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তাঁর নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস মহাসত্যকেই সবসময় ধারণ করে। তাই বঙ্গবন্ধুকে নীচে নামানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি নজরুলের কথা তুলে ধরে বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের বহুমাত্রিক প্রতিভা ও কর্ম নানাভাবে বাঙালিকে উজ্জীবীত করেছে, প্রেরণা যুগিয়েছে।নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সাম্য, সৌহার্দ্যবোধ, মানবিক চেতনা আজও আমাদের প্রাত্যহিক স্মরণীয়, বরণীয় বিষয়।

তিনি বলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কার প্রেক্ষাপট ও ঘটনাবলী তরুণ নজরুলের মানসে নতুন ভাবনার সৃষ্টি করে। সৈনিক জীবন থেকেও তার নানা অভিজ্ঞতা অর্জন পরবর্তীতে লেখনীর জন্য কাজ করেছে। উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্যে বিরুদ্ধে তিনি তাঁর লেখনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবীত করেছেন।

নজরুল-রবীন্দ্রনাথ নাম ও কর্ম আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে স্মরণীয় বলে উল্লেখ করে বলেন যতোদিন বাঙালি থাকবে, বাঙালাভাষা থাকবে ততোদিন তাঁরা বাঙালির হৃদয়ে অমর, অক্ষয় হয়ে থাকবে।

তিনি এ সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত দেশের প্রথম সয়েল আর্কাইভ ল্যাব ও ফার্মেসী ডিসিপ্লিনের মৌলিকুলার ল্যাব পরিদর্শন করেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসনসোলস্থ কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. মোনালিসা দাস। তিনি তাঁর তথ্যবহুল নিবন্ধে অত্যন্ত সাবলীল ও চমৎকারভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তদানিন্তন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা ও পরিবেশ তুলে ধরেন। তার নিবন্ধে নজরুলের সৈনিক জীবন, বিপ্লবী চেতনার উৎসপট, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মনোভাবনার নানাদিক ও প্রেক্ষাপট তুলে আনেন।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুমাত্রিক প্রতিভা, তাঁর জীবন ও কর্ম বাঙালির মানসপটে অবিস্মৃত হয়ে আছে। তাঁর লেখনি শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তি ও স্বাধীকারের পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের পক্ষে প্রেরণা যুগিয়েছে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে সবিশেষ অবদান রেখেছে। তাঁর লেখনী, দর্শন ও বিদ্রোহী চেতনা পরবর্তীতে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রেরণা সঞ্চার করে।

বাঙালির শোষণ মুক্তি, বৈষম্যের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করেছে। আমাদের স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলনের পথে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। এমনকি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর রাজনৈতিক মনোভাবনায় নজরুলের লেখনী ও সহচার্য দ্বারা দিপ্ত হয়েছেন, প্রেরণা পেয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই অনুসরণ করেছেন

উপাচার্য বলেন বঙ্গবন্ধু কবিকে অসীম শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন। কবির শেষ জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু তাঁকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে নিয়ে এসে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন,তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত করেছেন।সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শেখ মোঃ রজিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও প্রবন্ধকারকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় এবং সম্মাননা স্মারক উপহার দেওয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মাচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুবি প্রতিনিধি শফিক ইসলাম।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.